পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
বিবিধ কথা

হইয়াছে মাত্র, ইহা আমরা বুঝি না; তাই অপরাপর মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে শতবার্ষিকী-অনুষ্ঠানের মত তাঁহারও স্মৃতি-তর্পণ আবশ্যকীয় বলিয়া মনে করি।

 শ্রীরামকৃষ্ণ যে শ্রেণীর মহাপুরুষ— অবতারবাদে বিশ্বাস থাক বা না থাক—তাঁহাদের সংখ্যা অতিশয় অল্প। সমস্ত পৃথিবীকে দেশ, এবং সহস্র বৎসরকে কাল ধরিলে—এমন মহাপুরুষ সবকালে একটিও মেলে কিনা সন্দেহ। অন্ধ-ভক্তির কথা নয়, অন্ধ সাম্প্রদায়িক অশ্রদ্ধার কথাও নয়, সর্ব্বপ্রকার অভিমান ও স্বার্থসংস্কার মুক্ত হইয়া যিনিই এই মহাপুরুষের সমীপবর্ত্তী হইবেন তাঁহারই প্রতীতি হইবে যে, এই নরদেহধারী ‘ব্যক্তি’ আর সকল ব্যক্তি হইতে স্বতন্ত্র; এ যেন এক মহাশক্তি ও মহাসত্যের প্রকাশ; বিশ্বরহস্যের অন্তস্তল হইতে উৎসৃষ্ট—কাল ও মহাকালের সংঘর্ষে উৎক্ষিপ্ত—একটি জ্যোতিস্ফুলিঙ্গ। ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্ত্তমান সমগ্র কালধারায় ইহাকে প্রসারিত করিয়া দেখিতে না পারিলে, ইহার আয়তন সম্যক দৃষ্টিগোচর হয় না। এই আবির্ভাব যাহারই হউক, যে বাণী এই মূর্ত্তি পরিগ্রহ করিয়াছে তাহা যে কালাতীত এবং অপৌরুষেয়, তাহাতে সন্দেহ নাই। আবার কালাতীতকে কালের মধ্যে প্রকাশ হইতে দেখি, ইহাও সত্য; ইহার কারণ কি?

 অবতারবাদী হিন্দু বলিবে—‘যদা যদাহি ধর্মস্য গ্লানিঃ’; অবতারে বিশ্বাসী না হইলেও সেই বাক্যের এই অংশটুকু যে সত্য, তাহা বর্ত্তমান কালে প্রমাণ করিতে হইবে না। মানবেতিহাসের নানা যুগে বহু যুগন্ধর পুরুষের আবির্ভাব হইয়াছে—সেই সকল আবির্ভাব, ‘ধর্ম্মস্য গ্লানিঃ’ নয়, কালধারার সুস্থগতির ফলেই হইয়া থাকে—তাহা কালাতীতের আবির্ভাব নয়। কিন্তু ‘ধর্ম্মস্য গ্লানিঃ’ যাহাকে বলে, তাহার লক্ষণ একালে যেমন