উপাদেয় গ্রন্থের শরণাপন্ন হইব। ইহার কারণ, এই দুইজনেরই রচনার একটি পৃথক বিশিষ্ট মূল্য আছে। নিবেদিতার গ্রন্থ প্রায় পঁচিশ বৎসর যাবৎ আমার নিত্যসঙ্গী—এখনও পুরাতন হয় নাই। তাহার মধ্যে যে প্রাণ ও মন সর্ব্বত্র স্পন্দিত হইতেছে, তাহা জ্যোৎস্না-নিশীথের তারাখচিত আকাশের মত—তেমনই বিরাট গম্ভীর ও জ্যোতির্ম্ময়; সে আকাশের দিকে যখনই চাহিয়াছি, তখনই নিজ জীবনের ক্ষুদ্রতা ও অক্ষমতা ক্ষণকালের জন্য বিস্মৃত হইয়া চন্দ্রতারকার সভাতলে আসন পাতিয়াছি। গুরু-বিবেকানন্দের লোকোত্তর চরিত্র বুঝিবার ও বুঝাইবার সে কি আন্তরিক প্রয়াস—সেই মহনীয় পুরুষের দিব্যমূর্ত্তি আপনার চিত্রফলকে প্রতিবিম্বিত করিবার জন্য জ্ঞান ভক্তি ও প্রেমের সকল শক্তি একযোগে প্রয়োগ করার সে কি নিরন্তর সাধনা! নিবেদিতার রচনায় যেমন স্ফুটচন্দ্রতারকা বিভাবরীর গম্ভীর-মনোহর রূপ ফুটিয়া উঠিয়াছে, তেমনই মঃ রোলাঁর গ্রন্থ দুইখানিতে প্রভাতকিরণোজ্জ্বল নির্ম্মলনীল মানস-আকাশের—সদাজাগ্রত, আত্মসচেতন, অথচ ভাবগ্রাহী হৃদয়ের সুভঙ্গিম প্রতিচ্ছবি ফুটিয়া উঠিয়াছে। আমার আলোচনার পক্ষে এই দুইজনের উক্তিই যথেষ্ট। স্বামিজী বা পরমহংসদেবের সম্বন্ধে প্রবন্ধ-রচনা কিংবা বক্তৃতা করা যে কত সহজ, তাহা ইহা হইতে বুঝা যাইবে।
একালের ও সেকালের শিক্ষিত সমাজের মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণ সম্বন্ধে সাধারণত যে ধারণার আভাস পাই, তাহারই বিষয়ে কিছু বলিব। শ্রীরামকৃষ্ণ অপেক্ষা বিবেকানন্দের মূর্ত্তিই সাধারণের চক্ষে বৃহত্তর হইয়া বিরাজ করে; ভক্তগণের কথা স্বতন্ত্র, কিন্তু স্বামিজীর প্রবল ব্যক্তিত্বই যে সাধারণকে অধিক আকষ্ট করে, এবং শ্রীরামকৃষ্ণের মূর্ত্তি মন্দিরের অন্ধকারে দেববিগ্রহের মত কতকটা রহস্যাবৃত হইয়া আছে, ইহা অস্বীকার করা