পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
বিবিধ কথা

বিবেকানন্দ পৃথিবীর ঝড়ঝঞ্ঝা বুকে করিয়া আর্ত্তত্রাণ-ব্রতে আত্মোৎসর্গ করিয়াছিলেন বলিয়া তাঁহাকে তাঁহার গুরুর ‘direct antithesis’ বা সম্পূর্ণ বিপরীত প্রকৃতি বলিয়া ধারণা করিয়াছেন। আমাদের দেশের শিক্ষিত সাধারণও এ কথায় সায় দিবে। একজন সম্বন্ধে মঃ রোঁলা বলিতেছেন—“his life had been spent in the serene fulness of the cosmic joy”; আর একজন জীবনে বিশ্রাম চান নাই— “He was energy personified and action was his message to man”। এই দুই চরিত্রের কোনটি আধুনিক মানুষের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা অধিক অর্জ্জন করিবে, তাহা অনুমান করা দুরূহ নয়। কিন্তু গুরু ও শিষ্যের মধ্যে যে প্রভেদ তাহা যদি এইরূপই হয়, তাহা হইলে শিষ্য প্রচারিত গুরুর সেই বাণীও অর্থহীন হইয়া পড়ে। অতএব এই উক্তি, বা সাধারণের এই ধারণা কি অর্থে কতখানি সত্য, তাহারই আলোচনা করিব।

 শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের কাহিনী যাঁহারা পড়িয়াছেন তাঁহারা জানেন, এমনই একটি শিষ্য লাভ করিবার জন্য একদা শ্রীরামকৃষ্ণ কিরূপ আকুল হইয়াছিলেন। নরেন্দ্রকেই—এই antithesis-কেই—তাঁহার প্রয়োজন ছিল, এবং তাহাকে লাভ করা সহজ হয় নাই। ঘোরতর জ্ঞানপিপাসা ও তত্ত্বজিজ্ঞাসার সঙ্গে নরেন্দ্রের প্রকৃতিতে ছিল দুর্জয় স্বাতন্ত্র্য-কামনা। এ প্রকৃতি আমাদের দেশে বড় ভয়ের কারণ, ইহারাই অবশেষে সর্ব্বত্যাগ করিয়া দুর্গম পথে অন্তর্দ্ধান করে; ইহারাই স্নেহ প্রেম মমতার সকল মিনতি অগ্রাহ্য করিয়া সেইখানে প্রয়াণ করিতে চায়, যেখানে আছে, মঃ রোলাঁর ভাষায়—“the sapphire lake of eternity beyond the veil of tumultuous days”। তরুণ নরেন্দ্রকে