পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ
১১৫

দেখিবামাত্র শ্রীরামকৃষ্ণ তাহা বুঝিয়াছিলেন, তাহার ললাটের সেই শৈব-দীপ্তি তাঁহাকে আশান্বিত করিয়াছিল—সেই তেজকে তিনি নিজ করপুটে ধারণ করিয়া জগতের হিতার্থে নিয়োগ করিতে চাহিয়াছিলেন। ভাস্কর যেমন তাহার স্বপ্নকে রূপ দিবার জন্য সুদৃশ্য ও সুদৃঢ় পাষাণ-ফলক খুঁজিয়া বেড়ায়, এবং মনোগত মূর্ত্তির সহিত অবয়ব ও আয়তন মিলিলে, আনন্দের সীমা থাকে না—শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্রকে পাইয়া তেমনই আশ্বস্ত হইয়াছিলেন। কঠিন প্রস্তর যেমন ছেদনীকে প্রতি পদে প্রতিহত করিয়া লাবণ্যের কোমলতা অর্জ্জন করে—বিবেকানন্দও গুরুর হাতে তেমনই ভাবে গড়িয়া উঠিয়াছিলেন। তিনি সহজে শ্রীরামকৃষ্ণের নিকটে আত্মসমর্পণ করেন নাই। মঃ রোঁলা তাঁহার যে অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা বার বার উল্লেখ করিয়াছেন—সে ঝড় তুলিয়াছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ; সে ঝড় ধারণ করিবার উপযুক্ত মহাসাগর তিনি এই শিষ্যের মধ্যে চাক্ষুষ করিয়াছিলেন।

 গুরুশিষ্যের মধ্যে সেই সংগ্রামের কথা এবং সেই সংগ্রামে শিষ্যের পরাজয়, আত্মদান ও আত্মাহুতির মর্ম্ম যে না বুঝিয়াছে, সে এই মহানাটকের অপূর্ব্ব রসাস্বাদনে বঞ্চিত হইয়াছে। নরেন্দ্র প্রথমে আর কোনও কথা শুনিবে না, কেবল জানিতে চায়—তিনি সেই ‘বস্তু’ দেখিয়াছেন ও দেখাইতে পারেন কি না! যখন আর সংশয় রহিল না যে, এই নিরক্ষর অর্দ্ধোন্মাদ ব্রাহ্মণ সত্যই সেই মহাধনে ধনী, তখন আরও বিস্ময়ের কারণ হইল এই যে, জ্ঞান-অজ্ঞানের পারে যে পৌঁছিয়াছে সে আবার কিসের আকাঙ্ক্ষায় আকুল হৃদয়ে সাশ্রুনয়নে কি খুঁজিয়া বেড়ায়? পরব্যোমে স্থিত চিদ্‌ঘন আনন্দ-সত্তার আস্বাদন লাভ করিয়াও সে আবার কথা কয়!—তাহাকেও তুচ্ছ করিয়া মানুষের সঙ্গ চায়! এত বড়