বিবেকানন্দ কি শ্রীরামকৃষ্ণ হইতে স্বতন্ত্র? তবে তাঁহাকে আড়ালে রাখিলেন কেন? বুঝি তাঁহারও দোষ নাই; গুরুশিষ্যের এই সম্বন্ধ সত্যই রহস্যময়, আরও রহস্য এই যে, সে সম্বন্ধ বুঝিতে পারিলেও বারবার ভুল হয়—বিবেকানন্দের ব্যক্তিত্ব এত প্রবল যে, মানুষ আমরা এইরূপ প্রকট ব্যক্তিত্বের মহিমায় অভিভূত না হইয়া পারি না।
২
সে সম্বন্ধের কথা শ্রীরামকৃষ্ণ নিজেই একবার এক অপরূপ স্বপ্নভাষায় বিবৃত করিয়াছিলেন। মিষ্টিসিজ্ম কাহাকে বলে জানি, কিন্তু মিষ্টিকের অনুভূতি কেমন তাহা জানি না। তথাপি এই কথাগুলিতে যে তত্ত্ব যেভাবে প্রকাশ পাইয়াছে তাহাই যদি মিষ্টিকের রীতি হয়, তবে বলিব, অপরোক্ষ অনুভূতির যে সত্য তাহা প্রকাশ করিবার ইহাই প্রকৃষ্ট রীতি। এ রীতি দার্শনিক বা সাহিত্যিক রীতি নয়—এমন কি, ভাবকে রূপ দিবার যে বিশিষ্ট বাক্-পদ্ধতিকে আমরা কাব্য বলিয়া থাকি ইহা সেই কবিকর্ম্মও নহে। কবির ভাষায় ইহারই নাম—‘সৃষ্টি যেন স্বপ্নে চায় কথা কহিবারে’, অথচ সে কথা ‘অব্যক্ত ধ্বনির পুঞ্জ’ নয়—অব্যক্তকে বাক্যগোচর করিয়াছে। এ প্রসঙ্গে আমি এ পর্য্যন্ত যত কথা বলিয়াছি শ্রীরামকৃষ্ণের এই উক্তিই তাহার শেষ কথা, তাই ইহা দ্বারাই প্রবন্ধের উপসংহার করিব। এখানেও আমি অনুবাদের অনুবাদ দিলাম; দেখা যাইবে যে, শত অনুবাদেও এই দিব্য বারতার দীপ্তি এতটুকু স্নান হয় নাই। নরেন্দ্রের সহিত প্রথম সাক্ষাতের উল্লেখ করিয়া শ্রীরামকৃষ্ণ বলিয়াছিলেন—