পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ >२३> এই অপরূপ কাহিনীর মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ-তত্ত্বের পরমরহস্ত নিহিত রহিয়াছে। ইহার ব্যাখ্যা অসম্ভব—অর্থে নয়, ভাবে তাহা হৃদয়ঙ্গম করিতে হয়। কিন্তু ইহা হইতেই অনেকের মনে হইয়াছে, এই গাঢ় নিদ্রার গৃঢ় স্বপ্নে শ্রীরামকৃষ্ণ শিষ্যের যে পরিচয় পাইয়াছিলেন, তাহাতে তিনি যেন শিষ্যকেই তাহার গুরু বলিয়া বুঝিয়াছিলেন। এমন ভুল আর হইতে পারে না। বিবেকানন্দ যদি সেই ঋষি হন, এবং শ্রীরামকৃষ্ণকেই সেই শিশু বলিয়া বুঝিতে হয়, তাহ হইলে এই স্বপ্ননাট্যের নায়ক যে সেই শিশু তাহাতে সন্দেহ নাই । আরও দেখা যাইতেছে, সেই ঋষি মহাজ্ঞানী, আর সেই শিশু প্রেমের অমৃত-পুত্তলি,—জ্ঞানকে প্রেম স্পর্শ করিতেছে এবং সেই স্পর্শে নিম্পন্দ সাগর রসতরঙ্গে উদ্বেল হইয়া উঠিতেছে, যাহা চিদঘন তাহাই আনন্দে বিগলিত হইতেছে । ইহার মধ্যে কে বড়, কে ছোট, অথবা কাহাকে বাদ দিয়া কে স্বয়ম্পূর্ণ, তাহ নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। জ্ঞান সেই প্রেমকে তাহার অস্তরের ধন বলিয়া চিনিতে পারে, এবং তাহাতেই যেন গভীরতর আত্মোপলব্ধির আবেশে পুনরায় সমাধি-মগ্ন হয়। এই সমাধি-স্বপ্নে শ্রীরামকৃষ্ণ আপনাকে আপনি দেখিতেছেন, অথচ সে দেখার মধ্যে অহংজ্ঞান নাই । এমন আত্মহারা আত্মপরিচয়-দান মাহুষের কাহিনীতে দুর্লভ। আপনারই গৌরব অপরে সমৰ্পিত হইতেছে— প্রেম শিশুরূপে জ্ঞানের কণ্ঠলগ্ন হইতেছে ; তাহাতে যেমন আত্মাভিমান নাই, তেমনি আত্মসঙ্কোচও নাই। আমি যাইতেছি তুমিও আইস”— ইহা মিনতি না আদেশ ? মানুষের ভাষায় তাহা বুঝানো যায় না। সেই উদ্ধলোকের দৃশ্য নিম্নে পৃথ্বীতলেও অভিনীত হইয়াছিল। নরেন্দ্র এখানেও সেই শিশুর প্রতি তেমনই মুগ্ধনেত্রে চাহিয়াছিলেন।