পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শরৎ-পরিচয়

 তখন বোধ হয় ১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দ—শরৎচন্দ্রের নাম তখন আমাদের তরুণ সাহিত্যিক-সমাজে অজ্ঞাত, যদিও ইতিমধ্যে তাঁহার কয়েকটি গল্প একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছে। রবীন্দ্রনাথের পর তখন প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ই প্রসিদ্ধ গল্পলেখক, আর দুই-চারিজন যাঁহারা সাময়িক সাহিত্যে কিঞ্চিৎ খাতি অর্জ্জন করিয়াছেন, তাঁহাদের উপর আমার তেমন শ্রদ্ধা বা আশাভরসা ছিল না—আমার সাহিত্যিক আদর্শ বরাবরই কিছু স্পর্দ্ধাপূর্ণ। এমন অবস্থায় তখনকার একখানি ক্ষুদ্র মাসিক-পত্রিকা ‘যমুনা’য় যে কোন সত্যকার বড় প্রতিভার আবির্ভাব হইতে পারে, সে বিশ্বাসের কারণ ছিল না। অতএব ‘যমুনা’-সম্পাদক সাহিত্যিক-বন্ধু স্বর্গীয় ফণীন্দ্রনাথ পাল যখন দেখা হইলেই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নামক কোন এক সম্পূর্ণ অখ্যাতনামা লেখকের গল্প তাঁহার ‘যমুনা’ পত্রিকায় পড়িবার জন্য সনির্ব্বন্ধ অনুরোধ করিতেন, তখন নিতান্তই ভদ্রতার খাতিরে তাহাতে সম্মতি জানাইতাম, কিন্তু দুই তিন মাসেও তাহা পড়িবার অবকাশ বা প্রবৃত্তি হইত না। লেখকের নাম যেমন অপরিচিত, গল্পের নামও তেমনই সুসভ্য বা সুশ্রী নয়—‘রামের সুমতি’ ও ‘বিন্দুর ছেলে’—শুনিলে কিছুমাত্র ভক্তির উদ্রেক হয় না। অতএব ‘যমুনা’-সম্পাদকের এই প্রশংসার মূলে যে তাঁহার সম্পাদকীয় আত্মপ্রসাদ ভিন্ন আর কিছুই নাই, ইহাই মনে করিয়া নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু একদিন পুনর্ব্বার সাক্ষাতে সেই একই প্রসঙ্গে ফণীবাবু যখন বলিলেন—একবার ‘কুন্তলীন পুরস্কারে’র গল্পগুলির মধ্যে