পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-পরিচয়
১৩৯

মৌন অবলম্বন করিলেন। গল্প আর জমিল না; শেষে হাওয়াটা একটু হালকা হইল মাত্র। কিছুক্ষণ পরে অভিমানী কুকুরকে ডাকিয়া তাহার গালে পিঠে হাত বুলাইয়া বড়ই দুঃখভরে শরৎচন্দ্র তাহাকে বলিলেন, “কেন অমন করিস বল্ দেখি? রীতের দোষেই তো মার খাস!” সে কোলের কাছে আরও ঘেঁষিয়া আসিল, শরৎচন্দ্র যেন কিছু সুস্থ বোধ করিলেন।

 ইহার পর অনেকবার তাঁহার সহিত দেখা হইয়াছে—পরিচয় আরও ঘনিষ্ঠ হইয়াছে। ‘ভারতী’র বৈঠকে তিনি প্রায় আসিতেন। সেইখানে তাঁহার কথা শুনিবার ও নানা বিষয়ে তাঁহার মতামত ও মনোভাব জানিবার সুযোগ ঘটিয়াছে। তাঁহার কথাবার্ত্তায় সর্ব্বদা যে জিনিসটি বিশেষ করিয়া মনকে স্পর্শ করিত, তাহা পাণ্ডিত্য বা সূক্ষ্ম বিচারশক্তি নয়—জীবনের সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা ও সেই অভিজ্ঞতার ফলে একটা অতিশয় সহজ ও সুদৃঢ় প্রত্যয়; তিনি যাহা বলিতেন, তাহা পুঁথিগত বিদ্যার নির্য্যাস নয়, প্রত্যক্ষদর্শনের নিঃসংশয় ধারণা। তাঁহার কণ্ঠস্বর এমন মৃদু অথচ দৃঢ় ছিল, এবং কথার ভাষা এমন পরিচ্ছন্ন পরিস্ফুট ও প্রাণময় ছিল যে, তাহা আর কোন ভাষায় উদ্ধৃত করা যায় না। তাঁহার উপন্যাসের ভাষায় যে যত্নকৃত পারিপাট্য—ভাবের অব্যর্থ প্রকাশের দিকে যে সতর্ক দৃষ্টি আছে, যাহার জন্য তাঁহার রচনা এত হৃদয়গ্রাহী, তাহা হইতেও স্বতন্ত্র একটি গুণ তাহার মৌখিক আলাপ-আলোচনায়, গল্প বলিবার ভঙ্গিতে বিদ্যমান ছিল। যেন লেখার মধ্যে আর্টের স্বপ্ন আবরণে মানুষটির একটা পরিচয় পাই; কিন্তু সাক্ষাৎ আলাপের উপযুক্ত অবসরে, কোনও গুরুতর প্রসঙ্গের অবতারণায়, তাঁহার অন্তরের পরিচয় আরও স্বচ্ছ হইয়া উঠে; এবং সেই কারণে, তাঁহার রচনাবলীর ভাষ্যরূপে