পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪০
বিবিধ কথা

তাহা যেন শ্রোতার পক্ষে আরও মূল্যবান। সেই সকল আলাপের যতটুকু শুনিবার সৌভাগ্য আমার হইয়াছিল—সে ভাষা ও ভঙ্গি অনুসরণ করা দুঃসাধ্য হইলেও—আমি আজ তাহার কয়েকটি উদ্ধৃত করিব।

 পূর্ব্বে বলিয়াছি, ‘ভারতী’র বৈঠকে শরৎচন্দ্রের আলাপ শুনিয়াছি; আবার পৃথক একা অবস্থায় তাঁহার সঙ্গে আলাপ করিবার সুযোগ একাধিকবার ঘটিয়াছে। বৈঠকী আলাপে বাহিরের মানুষটিকে একরূপ দেখিবার ও চিনিবার সুবিধা হয় বটে, কিন্তু ভিতরের মানুষকে খুব অন্তরঙ্গভাবে জানিবার সুযোগ হয় না। তথাপি, ‘ভারতী’র বন্ধুসভায় একবার তাঁহার মুখে যে কয়েকটি কথা শুনিয়াছিলাম, তাহা শরৎচন্দ্রের রচনাগুলির একটি প্রধান প্রেরণা সম্বন্ধে খুবই মূল্যবান। কথা হইতেছিল মেয়েদের লইয়া। এক সময় মণিলাল সেই আলোচনায় যোগ দিয়া নারীদের স্বাভাবিক দুর্ব্বলতা ও কোমলতা সম্বন্ধে একটা কি মন্তব্য করিলেন। শরৎচন্দ্র এতক্ষণ একখানি শোয়া-চেয়ারে অর্দ্ধমুদ্রিত নেত্রে পড়িয়া ছিলেন—হঠাৎ সকলকে চমকাইয়া দিয়া বলিয়া উঠিলেন, “কি বললে মণিলাল? মেয়েরা বড় দুর্ব্বল? তোমরা তো মেয়েদের আসল মূর্ত্তি দেখ নি, শহরের বাবু-মেয়েই দেখেছ। একটা মেয়েমানুষ যে পরিমাণ মার খেয়ে হজম করতে পারে, পুরুষমানুষ তার সিকিও হজম করতে পারে না।” তারপর তিনি মেয়েদের সঙ্গে অন্য অনেক বিষয়ে পাল্লা দিয়া হারিয়া যাওয়ার কথা বলিলেন, তাহার সব ভদ্রসমাজে বলিবার মত সাহস আমার নাই। শেষে যাহা বলিলেন, তাহা সকলেই স্বীকার করিবেন। সেকালের বাঙালীর মেয়ে যে বয়সে শ্বশুরঘর করিতে যাইত, এবং সেখানে সেই অপরিচিত পরিবারের মধ্যে, অনেক সময়ে স্নেহলেশহীন ব্যবহার সহ্য করিয়া, তাহাকে যে ভাবে সেই সংসারে নিজের