স্থান করিয়া লইতে হইত, তাহা ভাবিতেও সেই বয়সের কোনও বালকের হৃৎকম্প উপস্থিত হইবে। আজিও যাঁহারা দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারে বহুসন্তানবতী জননী, তাঁহারা দিনে বিশ্রাম ও রাত্রে নিদ্রা ত্যাগ করিয়া—সারা বৎসর ঘরের নিত্যকর্ম্ম, শিশুপালন ও রোগীর সেবা ভগ্নদেহে অর্দ্ধাহারে করিয়া চলিতে থাকেন; একদিন ছুটি নাই, একটা রবিবারও নাই। মোটের উপর, মেয়েদের সম্বন্ধে একটা অতিশয় সত্য কথা—নিত্য অভিজ্ঞতার বাহিরে ও ভিতরে—দুই রূপেই, তিনি এমন করিয়া আমাদের মনে মুদ্রিত করিয়া দিলেন, যাহা আমরা উচ্চ সাহিত্যিকভাবমার্গে বিচরণ করিয়া সর্ব্বদা বিস্মৃত হইয়া থাকি। আমার মনে আছে—এই সকল কথা শুনিতে শুনিতে আমার একটি পুঁথি-পড়া বাক্য মনে পড়িয়াছিল। আমি সেই সভায় তাহারই পুনরুক্তি করিয়া বেশ একটু আত্মপ্রসাদ লাভ করিয়াছিলাম। কথাটি এই “Woman pays the debt of life not by what she does but by what she suffers”। সেদিন শরৎচন্দ্রের মধ্যে ‘বিরাজ বৌ’-এর লেখককে দেখিয়াছিলাম।
সেই দিন, কি আর একদিন, মনে নাই, শরৎচন্দ্র তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ বচনভঙ্গি সহকারে একটা সামান্য কথার উপলক্ষ্যে এমন একটি সত্যের ইঙ্গিত করিলেন, যাহাতে তাঁহার নিজের সমগ্র জীবনের আদর্শ উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল। মণিলাল নিতান্ত লঘুভাবে বলিতেছিলেন যে, অনেক চেষ্টা করিয়াও তিনি খাঁটি উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করিতে পারিলেন না; অর্থাৎ সমাজ ও পরিবারের সকল দায়িত্ব হইতে মুক্ত হইয়া জীবনকে একেবারে ব্যর্থ করিয়া তুলিতে পারিলেন না। শরৎচন্দ্র তখন বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ন্যায় বলিয়া উঠিলেন, “তুমি কি মনে কর, সেটা