এতই সহজ, মণিলাল! তোমার কথার ভাবে বোধ হচ্ছে—যা চারিদিকে ঘটছে, যা হবার জন্যে কোন চেষ্টাই করতে হয় না, বরং যার থেকে নিজেকে বাঁচাবার জন্যেই মানুষকে কত শাসন মেনে চলতে হয়—তুমি তাই চেষ্টা ক’রেও হতে পার নি, তাই বড় আশ্চর্য্য হয়েছ? কিন্তু একটি কথা জেনে রেখো, সত্যিকার ব’খে যেতে পারা যার-তার সাধ্য নয়—সে শক্তি খুব কম লোকেরই আছে, সে বড় ভাগ্যের কথা।” সামাজিক রীতিনীতি দ্বারা সুরক্ষিত, খ্যাতি প্রতিপত্তি ও আভিজাত্যমর্য্যাদার উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত অতিশয় ভদ্র ও সভ্য যে জীবন, তাহার তুলনায় তাহারই বিপরীত এই যে আর এক জীবন, যাহার সম্বন্ধে ভাবিতেও আমরা শিহরিয়া উঠি—আমাদের আজন্ম বা জন্মান্তরীণ সংস্কার বিদ্রোহ করে, তাহারই আদর্শকে শরৎচন্দ্র কোন্ অনুভূতির ও অভিজ্ঞতার বলে এত উচ্চে তুলিয়া ধরিলেন? সেও যেন একটা সাধনা, তাহাতেও সিদ্ধিলাভ একটা বড় পুরুষার্থ। এ যেন আমাদের দেশের তান্ত্রিক সাধকের কথা। সেদিন সেই ক্ষুদ্র আলোচনার অবকাশে আমি চকিতে শরৎচন্দ্রের জীবন ও সাহিত্যিক সাধনার মধ্যে একটা যোগসূত্র আবিষ্কার করিয়াছিলাম—বুঝিয়াছিলাম, এই প্রতিভার উন্মেষ হইয়াছে এক প্রকার তান্ত্রিক চিত্তবৃত্তির বশে; শরৎ-সাহিত্যে যে খাঁটি বাঙালী প্রতিভার একটি দিক ফুটিয়া উঠিয়াছে, যাহাতে বাঙালী জাতির হৃদয়যন্ত্রের একটা বড় তার বাজিয়া উঠিয়াছে, সে প্রতিভাৱ মূল অতি গভীর; তাহা বাঙালীর একটা রক্তগত সংস্কারের ফল। জাতীয় সাধনার সে ইতিহাস আজ আমরা বিস্মৃত হইয়াছি বলিয়াই শরৎ-সাহিত্যের বিচারে অতি-আধুনিক বিদেশী সমাজতন্ত্রের অতিশয় অগভীর দুই একটা তত্ত্বের আশ্রয় লইয়া থাকি। কিন্তু এ কথা পরে।
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৫৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
বিবিধ কথা
