পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-পরিচয়
১৪৩

 ইহার পর একবার শিবপুরের বাসাবাড়িতে তাঁহার সঙ্গে দেখা করিতে যাওয়ার কথা মনে আছে। তখন সাহিত্যের আদর্শ লইয়া সাময়িক-সাহিত্যে একটা বাক্‌যুদ্ধ চলিতেছিল; রবীন্দ্রনাথের একটি প্রবন্ধ নব্যদলের দলপতিগণের ভাল লাগে নাই। শরৎচন্দ্রও ইহাতে যোগ দিয়েছিলেন, এবং রবীন্দ্রনাথের সহিত একমত হইতে না পারা তাঁহার পক্ষে স্বাভাবিক হইলেও, তিনি বিচারশক্তি অপেক্ষা ভাবানুভূতির উপরেই অধিক নির্ভর করিয়াছিলেন। এই বাদপ্রতিবাদ হইতে দূরে থাকিলেও, আমি এই সময়ে তখনকার এক প্রধান সাপ্তাহিক পত্রিকায় কিছু লিখিতে বাধ্য হইয়াছিলাম। শরৎচন্দ্রের সহিত আলাপে আমি তাঁহার লিখিত প্রতিবাদ সম্বন্ধে খোলাখুলি আমার মত প্রকাশ করিয়াছিলাম; এবং ইহাও বলিয়াছিলাম যে, তাঁহার সাহিত্যিক প্রতিভা সমালোচনা-শক্তির অনুকূল নয়; অনুভূতির দিক দিয়া তিনি সাহিত্যের বিষয় ও প্রেরণা সম্বন্ধে খুব সত্য ও গভীর কথা—সূক্ষ্ম যুক্তি-বিচার না মানিয়াও বলিতে পারেন বটে, কিন্তু তাহা কবিরই মত, সমালোচকের মত নয়; এজন্য কোনরূপ রীতিমত বিতর্কে পক্ষাপক্ষ অবলম্বন করিয়া কিছু বলিতে যাওয়া তাঁহার পক্ষে নিরাপদ নয়। আমি এ কথা তাঁহাকে নিঃসংকোচে বলিয়াছিলাম, তাহাতে তিনি কোন প্রতিবাদ বা অসন্তোষ প্রকাশ করেন নাই। আমার বেশ মনে আছে, ঐ আলোচনার প্রসঙ্গেই তিনি এমন দুই-একজন লেখকের সাহিত্যিক প্রতিভা সম্বন্ধে তাঁহার বিস্ময় প্রকাশ করিয়াছিলেন—এমন কি একজনকে তাঁহার অপেক্ষা বড় লেখক বলিয়া মত প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, তাহাতে আমি হাস্য সম্বরণ করিতে পারি নাই। আপনাকে আপনি দেখিবার মত ক্ষমতা তাঁহার ছিল না; তাঁহার সৃষ্ট মানব-মানবী সম্বন্ধে তাঁহার যেমন কোন