পরিপূরক বলিয়াই বুঝিয়া লওয়া উচিত। সেই কাহিনী শুনিয়া তিনি অতিশয় অসহিষ্ণুভাবে বলিয়া উঠিলেন, “ও জাত সব পারে, উহার পক্ষে অসাধ্য বা অসম্ভব কিছুই নাই!”—বলিয়া তাঁহার নিজের দেখা একটা ঘটনা বিবৃত করিলেন, একবার কোন একটি ভদ্রবংশের বয়স্ক মহিলা অতিশয় নির্লজ্জ ইন্দ্রিয়পারবশ্যের যে পরিচয় দিয়াছিলেন, তাহাই সবিস্তারে বলিলেন—সেই গল্পটি প্রকাশ করায় বাধা আছে বলিয়াই করিতে পারিলাম না। কেবল এইমাত্র বলিতে পারি যে, ইহা সাধারণ দুশ্চরিত্রতার কথা নয়—যে অবস্থায় ও যে ভাবে এই স্ত্রীলোক অতিশয় প্রকাশ্যে আপনার সকল ধর্ম্ম বিসর্জ্জন দিয়াছিল, তাহার জাতি কুল নারীত্ব ও মাতৃত্ব—সকল সংস্কার ত্যাগ করিয়াছিল, তাহা শুনিলে এই প্রশ্নই জাগে যে, জীবপ্রসূতি সর্ব্বংসহা যে নারী, তাহার পক্ষে ইহাও সম্ভব হয় কি করিয়া? যেন সৃষ্টির একটা অতি দুর্ব্বোধ্য ও ভীতিপ্রদ নিয়মের লীলা, এইরূপ নারী-চরিত্রে ক্বচিৎ কখনও উদ্ঘাটিত হইয়া থাকে। এই গল্প বলিবার সময়ে শরৎচন্দ্রকে অতিশয় নির্ম্মম ও নিষ্ঠুর বলিয়া মনে হইয়াছিল; তিনি যেন অকম্পিত হৃদয়ে দৃঢ় দৃষ্টিতে একটা সত্যকে প্রত্যক্ষ করিতেছেন—তাঁহার কোন ভয় নাই, দুঃখ নাই। আবার তাঁহার মধ্যে সেই শবসাধক তান্ত্রিকের বংশধরকে দেখিলাম। সেদিন যাহা ভাল করিয়া বুঝি নাই, আজ তাহা বুঝিতে পারি। এই মানুষ আমাদের এই সমাজ ও জীবনের গণ্ডিতেই সর্ব্বসংস্কারমুক্তির সাধনা করিয়াছিলেন—এ সমাজের সংস্কারবন্ধন বড় দৃঢ় বলিয়াই সেই সাধনায় শক্তিবিকাশের সুবিধা হইয়াছিল। তান্ত্রিক শক্তিকে উপলব্ধি করিতে চায় ভীষণের মধ্যে, দলিত মথিত হৃৎপিণ্ডের উপরেই শক্তির পদ্মাসন গড়িয়া তোলে। আমাদের এই হীনবীর্য্য পুরুষের সমাজে
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৫৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-পরিচয়
১৪৫