নারীই শক্তির আধার হইতে বাধ্য। ক্ষীণ বলিয়াই নিষ্করুণ যে নর, তাহার অত্যাচারে আমাদের দেশের মেয়েদের দেহে মনে ও প্রাণে এমন একটা সংযম-সহিষ্ণুতার বিকাশ হয়, যাহা অবস্থাবিশেষে অমানুষী শক্তির আকার ধারণ করে। নারীর মধ্যে এই শক্তির নানা রূপ তিনি দেখিয়াছিলেন—সাহিত্যে তাহার সব প্রকাশযোগ্য নয়; জীবনের সত্য ও আর্টের সঙ্গতি—এই দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান থাকিবেই। এই অস্বাভাবিক অবস্থার পীড়নে নারী ক্রমাগত আত্মসঙ্কোচ করে—সেই আত্মসঙ্কোচের দ্বারাই তাহার সকল বৃত্তি একমুখী হইয়া যে বজ্রগর্ভ তাড়িৎ উৎপন্ন করে, তাহার আঘাতে মৃত্যু, ও আলোকে অমৃত লাভ হয়। এক দিকে সেই শক্তিই যেমন সৃষ্টিকে রক্ষা করে—তাহাকে পূর্ণ করিয়া তোলে, তেমনই, অপর দিকে তাহাকে শূন্য করিয়া দেয়। নারীর সেই শক্তি যেন একটা অবোধ প্রাণশক্তি—তাহার সেই চরম স্ফুর্ত্তির অবস্থায়-ত্যাগে ও ভোগে, প্রেমে ও অপ্রেমে—মনের কোন হিসাব-জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায় না। সে যেন একটা elemental, বা অন্ধ জড়শক্তির লীলা; তাই বুদ্ধিজীবী পুরুষ তাহা দেখিয়া স্তম্ভিত হইয়া যায়। কিন্তু সেই শক্তির এক দিক—আত্মত্যাগের দিক—সৃষ্টির সহায়তা করে বলিয়া, সমাজের পক্ষে তাহা মঙ্গলকর বলিয়া, পুরুষচিত্ত মুগ্ধ হয়; তাহার জীবনের সেই ট্র্যাজেডি আমাদের মনে এক অপরূপ মহিমাবোধ উদ্রিক্ত করে। শরৎচন্দ্রের হৃদয় স্বভাবত এই দিকেই আকৃষ্ট হইয়াছিল। তথাপি অতি গভীর সহানুভূতি ও অপরিসীম সাহসের বলে তিনি নারী-চরিত্রে এই শক্তির মূল লক্ষ্য করিতে পারিয়াছিলেন বলিয়া মনে হয়। যাহা এক দিকে অমানুষী কাম, ও অপর দিকে অমানুষী প্রেমরূপে প্রতীয়মান হয়, তাহা যে মূলে একই—
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৫৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৬
বিবিধ কথা