পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতির জীবন ও সাহিত্য

আজ সূক্ষ্ম চিস্তা ও সুক্ষ্ম ভাবের চর্চ্চাকে নিতান্ত নিরর্থক মনে করিতে বাধ্য হইয়াছে। গাছই যদি মরিয়া গেল, তবে ফুলের হিসাবে আর প্রয়োজন কি? ভিটাই যদি উৎসন্ন হইল, তবে পুষ্পোদ্যানের ভাবনা করিয়া কি হইবে? তথাপি একটা কাজ আছে। সাহিত্য তো কেবল কাব্যসৃষ্টিই নয়, ভাষা কেবল বিদ্যারই বাহন নয়। যতক্ষণ শ্বাসপ্রশ্বাস বহিতেছে, ততক্ষণ ভাবনাও আছে, সাহিত্যও শেষ পর্য্যন্ত সেই শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রবাহ। অতএব একালে সকল সাহিত্যচর্চ্চার মূলে থাকিবে জাতির জীবনরক্ষার ভাবনা—মৃত্যুঞ্জয়-মন্ত্রের আরাধনা।

 দেশে অতিশয় বর্ত্তমানে যাহা ঘটিতেছে, তাহার সম্বন্ধে কিছু বলিবার অধিকার আমার নাই, সেদিকে তাকাইলে হৃদয় অবসন্ন হয়। অবস্থা এমন হইয়াছে যে, সে যেন মামুষের হাতে আর নাই—আমরা এখন ভগবানের বা মহাকালের দরবারে বিচারাধীন হইয়াছি। কিন্তু তাহাতেই অভিভূত হইলে চলিবে না, বিনাশের মহাগহবরতীরে দাঁড়াইয়া চৈতন্য হারাইলে চলিবে না। কারণ, মানুষের প্রাণ, কৃতকর্ম্মেরর বিচার বা প্রায়শ্চিত্তের ভয়ঙ্কর মুহূর্ত্তেও জাগ্রত থাকে—আত্মার দুর্ব্বলতা কোন কালেই মার্জ্জনীয় নয়। মৃত্যু যদি অবধারিত হয়, তথাপি মানুষের অধিকার ত্যাগ করিব না; ন্যায় ও সত্যের নিকটে যেমন মস্তক অবনত করিব, তেমনই মানুষের যাহা শ্রেষ্ঠ সম্পদ, সেই প্রেমকে ক্ষুন্ন করিব না। আমার জাতি অপরাধ করিয়াছে—ইহাই যদি সত্য হয়, যদি পাপ করিয়াছে বলিয়া দণ্ডের যোগ্য হয়, তথাপি সেই পাপ ও অপরাধকে স্বীকার করিয়াও, তাহার প্রতি প্রেমহীন হইব না। জাতির মধ্যে যদি একজনও প্রেমিক থাকে, তবে তাহার পুণ্যে সমগ্র জাতি উদ্ধার পাইবে;