পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-পরিচয়
১৪৭

যে প্রেম বিনা চিন্তায় আত্মবিসর্জ্জন করে, এবং যে কাম ঘৃণা লজ্জা ভয় স্নেহ মমতা প্রভৃতি সর্ব্বসংস্কারবর্জ্জিত—সেই উভয়ের মূলে যে একই তত্ত্ব আছে, তান্ত্রিক সাধক তাহাকে উপলব্ধি করিয়া অভয় হইতে চায়। শরৎচন্দ্রও যে পথে সাধনা; করিয়াছিলেন, তাহাতে সেই তত্ত্বের আভাস তিনিও পাইয়াছিলেন—তাই নারী-চরিত্রের অন্তস্তলে দৃষ্টি করিয়া তাঁহার বিস্ময়ের অন্ত ছিল না। কিন্তু তান্ত্রিকের শক্তিসাধনার যে আদর্শ, তাঁহার অতি কোমল স্পর্শকাতর হৃদয় তাহা হইতে প্রতিনিবৃত্ত হইয়াছিল—সেই তত্ত্বকে স্বীকার করিলেও এবং তদ্দ্বারা নারীচরিত্র সম্বন্ধে অধিকতর অভিজ্ঞ হইলেও, সেই জ্ঞান তিনি সহ্য করিতে পারিতেন না।

 তাই যখন সেই নারীজাতির সম্বন্ধে তাঁহার মুখে শুনিলাম, “ও জাতের কথা ব’ল না, ওরা পারে না এমন কাজ জগতে নেই!” তখন তাঁহার মত নারী-মহিমার উপাসক এই কথায় নারীকে গালি দিতেছিলেন, না, শক্তিসাধক তাহার ইষ্টদেবতার স্বরূপ দর্শন করিয়া দুর্ব্বল মুহূর্ত্তে যে আর্ত্ত চীৎকার করে, শরৎচন্দ্রও এখানে তাহাই করিতেছিলেন? সেদিন তাঁহার মুখে যে কথা শুনিয়া আশ্চর্য্য হইয়াছিলাম, আজ তাহার গভীরতর কারণ সন্ধান করিয়া সেই বিরোধের সমাধান করিতে চাই। মনে হয়, তিনি মানুষের হৃদয়বৃত্তিকে যে দিক দিয়া অনুধাবন করিয়াছিলেন, এবং আমাদের সমাজে তাহার যে চূড়ান্ত লীলা দেখিয়াছিলেন নারীর জীবনে—তাহার পরে আর অগ্রসর হইতে সাহস পান নাই। তাঁহার সাধনায় তান্ত্রিকের মনোভাব থাকিলেও তাহা প্রেমের সাধনা, জ্ঞানের নয়। এই দুইকে যদি তিনি সাহিত্যসাধনায় মিলাইতে পারিতেন—আর কিছু না হউক, যদি তাঁহার সেই আশ্চর্য্য