পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৮
বিবিধ কথা

ভাবকল্পনা ও অনুভূতিশক্তির উপরে জ্ঞানের কঠোর শাসন কিছু থাকিত, তবে বাংলা সাহিত্যে খুব বড় ও পূর্ণতর বাস্তবতার প্রতিষ্ঠা হইত। কিন্তু তাহা ছিল না বলিয়া আমরা আর্টিস্ট শরৎচন্দ্র অপেক্ষা মানুষ শরৎচন্দ্রের দ্বারা অধিকতর আকৃষ্ট হই, এবং তাঁহার রচিত সাহিত্যের রসসৌন্দর্য্যের মূলে একটা মানুষের জাগ্রত হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনধ্বনি শুনিয়া আশ্বস্ত ও পুলকিত হই। এই জ্ঞানের দিক—তান্ত্রিক সাধনার সেই তত্ত্বদৃষ্টি—তাঁহার বুদ্ধিকে যে এড়ায় নাই, তাহা পূর্ব্বে বলিয়াছি; বরং ইহাই যে শেষে তাঁহার উপরে কতক পরিমাণে আধিপত্য করিয়াছিল— তাঁহার ভাবজীবন বা কবিজীবনকে অভিভূত করিয়াছিল, তাহার প্রমাণ তাঁহার ‘শেষ প্রশ্ন’ নামক উপন্যাসে স্পষ্ট পাওয়া যাইবে। কিন্তু সেখানে ভাবদৃষ্টি ও জ্ঞানদৃষ্টির সমন্বয় হয় নাই—সাহিত্যসৃষ্টিতে তাহা সার্থক হইয়া উঠে নাই।

 শরৎচন্দ্রের হৃদয় যে কত কোমল—তাঁহার অনুভূতিশক্তি যে কত অসাধারণ ছিল, তাহার প্রমাণ তাঁহার রচনাগুলিতে সর্ব্বত্র উজ্জ্বল হইয়া আছে। শরৎচন্দ্র চিন্তা করিতেন হৃদয় দিয়া—মস্তিষ্ক দিয়া নহে; যাহাকে হৃদয়ের দুর্ব্বলতা বলা যায়, তাহাই ছিল তাঁহার কল্পনা ও জ্ঞানবৃত্তির সহায়। সেই প্রবল সেণ্টিমেণ্টযুক্ত সহানুভূতিই যেমন এক দিকে তাঁহার প্রতিভার শক্তি, তেমনই অপর দিকে তাঁহার অশক্তির কারণও তাহাই। উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে নবযুগ আসিয়াছিল যে মানবতার প্রেরণায়—তাহাতে বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস হইতেই মানুষের জীবনকে এক নূতন আদর্শবাদের দ্বারা মণ্ডিত করা হইয়াছিল। সেই আদর্শবাদ ভাবকল্পনার রসেই পুষ্ট হইয়াছিল, তাহা বৃহত্তর ও মহত্তর জীবনের সত্যকেই ধরিতে চাহিয়াছিল। কিন্তু ভাব