বা আইডিয়া হইতে নামিয়া মানুষের বুকে কান রাখিয়া তাহার বাস্তব হৃদয়স্পন্দন শুনিবার কৌতূহল সেযুগে কাহারও হয় নাই—মানবতার সেই একান্ত স্নায়ুশিরাশোণিতময় অনুভূতি কাহারও সাধনার বস্তু হয় নাই। মানুষকে—কোন তত্ত্ব, ধর্ম্ম, বা নীতিসংস্কারের দ্বারা নয়—কেবলমাত্র নিজ হৃদয়ে আলিঙ্গন করিয়া, তাহার প্রাণের আকৃতিকেই আর সকল সত্য অপেক্ষা বড় বলিয়া ঘোষণা করার যে মানবতা, বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্রের তাহাই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ দান। এই মানবতার সাধনা তাঁহার জীবনেই হইয়াছিল—ভাব বা কল্পনাযোগে নয়; সেইজন্যই তাঁহার সাধনাকে তান্ত্রিক সাধনা বলিয়াছি। রক্ত-মাংস-শিরা-শোণিতের মধ্য দিয়া যে উপলব্ধি, তাহাই তান্ত্রিক সাধনা—অপর সাধনার নাম যোগ-সাধনা, তাহা অন্তরিন্দ্রিয়ের সাহায্যে হয়; অতি সূক্ষ্ম মানসসাধনাও তাহাই। এইজন্য যোগী ও তান্ত্রিকের মধ্যে এত বিরোধ। এই যে দেহ দিয়া, বাস্তব হৃদয়বেদনার মধ্য দিয়া উপলব্ধি, ইহার জন্য দেহের শক্তি চাই—স্নায়ুশিরার অসহ্য পীড়ন সহ্য করা চাই। শরৎচন্দ্রের এই অবস্থা একবার দেখিয়াছিলাম এবং তাহাতেই বুঝিয়াছিলাম, সাহিত্যে তিনি যাহা রচনা করিতেছেন, তাঁহার জীবনে তাহার উপলব্ধি হয় কোন্ প্রণালীতে। সে বার কোন এক প্রয়োজনে তাঁহার সাম্তাবেড়ের বাড়িতে তাঁহার সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছিলাম। শরৎচন্দ্রের সেই বাসস্থান দেখিলে মনে হইবে, তিনি এতদিনে মনের মত জীবন যাপন করিতেছেন। ভিতরের দিকে গৃহসংলগ্ন উদ্যানে অসংখ্য গোলাপ ফুটিতেছে, বাহিরে বাঁধের অনতিদূরে রূপনারায়ণের অকূল বিস্তার। অতিশয় পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটীরূপে সাজানো ঘরখানিতে গৃহস্বামীকে দেখিয়া সানন্দে অভিবাদন করিলাম। অনেক কথা হইল,
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৬২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-পরিচয়
১৪৯