পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
বিবিধ কথা

কিন্তু কিছুর মধ্যেই যেন আগ্রহ নাই—সকলের মধ্যেই একটা গভীর অবসাদ ও নৈরাশ্যের ভাব। শেষে কারণ বুঝিলাম। সম্প্রতি তাঁহার ভ্রাতৃবিয়োগ হইয়াছে—নিজেই বলিলেন, না বলিয়া পারিলেন না। কিন্তু সে ব্যথা যে ভাষায়, যে স্বরে প্রকাশ করিলেন, তাহাতে মানুষের যন্ত্রণাকে যেন চাক্ষুষ করিলাম। তাঁহার এই ভাই সংসারাশ্রম ত্যাগ করিয়াছিলেন, শরৎচন্দ্রের সঙ্গে তাঁহার দেখা-সাক্ষাৎ কম হইত। কিন্তু এইবার তিনি যেন মৃত্যু আসন্ন জানিয়াই শরৎচন্দ্রের গৃহে আবির্ভূত হইয়াছিলেন। শরৎচন্দ্র বলিলেন, “বাঁচিয়া থাকিতে আমাকে তাহার প্রয়োজন হয় নাই; শেষে মরিবার জন্য আমার কোলে ফিরিয়া আসিল। তাহার সেই মৃত্যুযন্ত্রণা আমি ভুলিতে পারিব না। দুই হাতে তাহাকে বেড়িয়া ধরিয়া দিন ও রাত কাটাইয়াছি—আমার বুকে মাথা রাখিয়া তাহার সে কি কান্না! সে যাতনার কিছুমাত্র উপশম করিতে পারি নাই; কেবল নিরুপায়ভাবে তাহাকে বুকে ধরিয়া বসিয়া ছিলাম, সেই একই অবস্থায় তাহার প্রাণ বাহির হইয়া গেল!” ঠিক সেই কথা ও সেই কণ্ঠস্বর উদ্ধৃত করা অসম্ভব, আমি আমারই ভাষায় তাহার ভাবার্থ জ্ঞাপন করিলাম মাত্র। সেদিন সেই কয়টি কথার মধ্যে, এবং সেই শোককাতর মূর্ত্তিতে, মানুষের দেহ-প্রাণের নিয়তি-নির্য্যাতন—মনুষ্যজন্মের অপরিহার্য্য দুঃখের স্বরূপকে যেন সাক্ষাৎ উপলব্ধি করিলাম, শরৎসাহিত্যের মানবতার মূল উৎসের সন্ধান পাইলাম। এই মানুষের জীবনসাধনায় তান্ত্রিকের আচার লক্ষ্য করি বটে, কিন্তু যাহার হৃদয় এত দুর্ব্বল, যে জীবনকে জয় করিবার জন্য——যুপবদ্ধ পশু বা মানুষের যন্ত্রণা নির্ব্বিকারভাবে দেখা দূরে থাক—সেই যুপকাষ্ঠে আপনাকে আবদ্ধ করিয়া যন্ত্রণার পরিধি নির্ণয় করে, সে তান্ত্রিক হইলেও মানবতার তান্ত্রিক,