যন্ত্রাদি সাজানো রহিয়াছে। আমার বড় ইচ্ছা ছিল, প্রকাশিতপ্রায় আমার একখানি বই প্রথম তাঁহার হাতেই উপহার দিই, কিন্তু তাহা দপ্তরীর ঘর হইতে বাহির হইতে তখনও একটু বিলম্ব আছে। আমি তাড়াতাড়ি এক খণ্ড মাত্র বাঁধিয়া দিতে বলিয়াছিলাম—পরদিন প্রাতঃকালে তাহা পাইবার কথা। তাই জিজ্ঞাসা করিলাম, পরদিন কোন্ সময় আসিলে তাঁহার অসুবিধা হইবে না। তিনি অতিশয় আগ্রহ করিয়া আমাকে যে-কোন সময়ে আসিতে বলিলেন—যাত্রাকালের পূর্ব্বে হইলেই চলিবে। পরদিন বেলা ৮।৮॥ টার সময়ে পৌঁছিয়া দেখিলাম, তাঁহার ঘরখানি জনবিরল; চারুবাবু সকল দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করিয়া দিয়াছেন—সকলেই বিদায় লইয়া গিয়াছে। আমি বইখানি হাতে দিয়া বসিতেই আলাপ সুরু হইল।
প্রথমেই তাঁহার স্বাস্থ্যের কথা তুলিলাম। সে কথায় অতিশয় ক্লান্ত, এবং মৃদু অথচ দৃঢ়কণ্ঠে বলিলেন, “মোহিত, আমি মৃত্যু কামনা করি, আমার আর এতটুকু বাঁচিতে ইচ্ছা নাই।” কথাটা যেন কেমন বোধ হইল, আমি প্রতিবাদ করিলাম—মনে করিয়াছিলাম, জীবন কোন কারণে অসহ্য হইয়াছে বলিয়াই বোধ হয় তিনি মৃত্যু কামনা করিতেছেন; তাই বলিলাম, নিজের মৃত্যু কামনা করা ও আত্মহত্যা করা একই কাজ—তাঁহার মত লোকের মুখে এমন কথা বাহির হওয়া উচিত নয়। শুনিয়া তিনি হাসিলেন, বলিলেন, “না, তোমার বয়সে তুমি ইহা বুঝিবে না; মানুষের জীবনে এমন একটা সময় আসে, যথন সুখ-দুঃখ সকল চেতনাই মন হইতে খসিয়া যায়, এবং জীবনকে আর তিলার্দ্ধ সহ্য করিতে পারে না। আমার তাহাই হইয়াছে। আমি দুঃখ বা সুখের কথা ভাবিতেছি না—আমি জীবন হইতে অব্যাহতি চাই মাত্র।