পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-পরিচয় >Q○ তুমি বিশ্বাস করিতেছ না ? আমি অন্তেরও এমন অবস্থা হইতে দেখিয়াছি । ছেলেবেলায় আমি আমার এক দিদির কাছে থাকিতাম । র্তাহার বৃদ্ধা দিদিশাশুড়ী তখন বাচিয়া ছিলেন ; তিনি অতিশয় বৃদ্ধ হইয়াছিলেন ; শেষে কিছুকাল রোগভোগ করিতেছিলেন । এরূপ অবস্থায় রোগমুক্তি অথবা শীঘ্ৰ মৃত্যুর আশায় হিন্দু যাহা করে, গ্রামের সকলে তাহাই করিতে পরামর্শ দিল, বলিল, ‘প্রাচিত্তিরটা করিয়ে দাও, এমুন ভাবে রাখা ঠিক নয়। প্রায়শ্চিত্ত করিতে বৃদ্ধার কি আনন্দ ! যেন কত আশা ! প্রায়শ্চিত্তের পরে কবিরাজ একদিন তাহার নাড়ী দেখিয়া তাহাকে আশ্বাস দিয়া বলিলেন—র্তাহার জর আর নাই, তিনি এ যাত্রা বাচিয়া গেলেন। শুনিয়া বুদ্ধার মুখ কঠিন হইয়া উঠিল, একটি কথা কহিলেন না। সেদিন রাত্রে একটা শব্দে আমার ঘুম ভাঙিয়া গেল —আমি বাহিরের ঘরে শুইতাম, ভিতরে উঠানের দিকে বার বার একটা কিসের শব্দ হইতেছে। দরজা খুলিয়া উঠানে নামিয়া শব্দের নিকটে আসিয়া দেখি—উঠানের মাঝখানে যে ঠাকুরঘর আছে, তাহারই দুয়ারের পৈঠায় সেই বৃদ্ধ পাগলের মত আপনার মাথা ঠকিতেছে আর বলিতেছে, তুমি আমাকে নেবে ন—এত ক’রে ডাকছি, তবু তোমার দয়া নেই। স্থানটা রক্তে ভাসিয়া গিয়াছে। বুঝিলাম, রাত্রে সকলে ঘুমাইলে পর সেই চলৎশক্তিহীন বৃদ্ধ আপনার দেহটাকে এতদূর টানিয়া আনিয়াছে—বড় আশায় হতাশ হইয় তাহার দেহের শেষ শক্তিটুকু দিয়া তিনি এই কাজ করিয়াছেন। সকলকে ডাকিয় তাহাকে ধুইয়া মুছিয়া ধরাধরি করিয়া ঘরের ভিতরে আনিয়া বিছানায় শোয়াইয়। দিলাম। ইহার পর তিনি আর বেশিদিন জীবিত ছিলেন না । সেদিন যাহা বুঝি নাই, আজ তাহা বুঝি। আমারও সেই অবস্থা হইয়াছে।”