ইহার পর, দুইজনেই চুপ করিয়া রহিলাম। তিনি আমার বইখানির পাতা উল্টাইতে লাগিলেন—যেখানে তাঁহার সম্বন্ধে লিখিয়াছি, সেইখানে চোখ বুলাইয়া বলিলেন, “দেখ, লোকে বলে আমি বঙ্কিমের অনুরাগী নই—আমার যেন বঙ্কিমের প্রতি একটা ব্যক্তিগত বিদ্বেষ আছে।” আমি বলিলাম, আপনার নিজের স্বাধীন মতামত প্রকাশে কুণ্ঠিত হইবার কারণ নাই—সমালোচক হিসাবে আপনার মতামতের মূল্য যেমনই হউক, আপনাকে বুঝিবার জন্যই আপনার সরল অকপট উক্তির একটা পৃথক মূল্য আছে। অতএব বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলির সম্বন্ধে আপনার ব্যক্তিগত ধারণাই আমরা জানিতে চাই—সাহিত্যিক সমালোচনা হিসাবে নয়। আমি জানি, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে কবিকল্পনার যে ধর্মভ্রষ্টতা আছে, তাহার একটা বড় দৃষ্টান্তস্বরূপ আপনি ‘কৃষ্ণকান্তের উইলে’র রোহিণী-চরিত্রের পরিণাম বঙ্কিমচন্দ্র যেমন চিত্রিত করিয়াছেন, তাহার উল্লেখ করিয়া থাকেন। এই কথা বলিবামাত্র তিনি যেন পূর্ণ সজাগ হইয়া উঠিলেন—আমাকে আর কিছু বলিতে না দিয়া নিজেই বলিতে লাগিলেন, “দেখ, জীবনের সত্যকে, যত বড় কবিই হউক, লঙ্ঘন করিতে পারেন না; নারীর সম্বন্ধে যে ধারণা আমাদের সমাজে সংস্কারের মত বদ্ধমূল হইয়াছে, তাহা যে কত মিথ্যা, তাহা আমি জানি বলিয়াই কোন কবি, বিশেষ করিয়া যিনি খুব বড় কবি বলিয়াই সম্মান পাইয়া থাকেন, তাঁহার লেখায় দায়িত্বহীন কল্পনার অবিচার আমি সহ্য করিতে পারি না। ধর্ম্ম ও নীতিশাস্ত্রের অনুরোধে মানুষের প্রাণকে ছোট করিয়া দেখিতে হইবে—নারীর জীবনের যেটা সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি, তাহাকেই একটা কুৎসিত কলঙ্করূপে প্রকাশ করিতে হইবে—ইহাতে কবিপ্রাণের মহত্ত্ব বা
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৬৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৪
বিবিধ কথা
