পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৬
বিবিধ কথা

তাঁহার কাছে কাহারও যাইবার জো ছিল না। আমি লুকাইয়া যাইতাম—মাথায় পায়ে একটু হাত বুলাইয়া দেওয়া, দুই একটা ফল সংগ্রহ করিয়া তাঁহাকে খাওয়াইয়া আসা,—আমার নিজের অসুখ হইলে, রোগীর পথ্যরূপে যাহা পাইতাম, তাহা হইতে কিঞ্চিৎ তাঁহার জন্য লইয়া যাওয়া—ইহাই ছিল আমার যথাসাধ্য সেবা। কিন্তু সেই অবস্থাতেও, মানুষের হাতে এই পৈশাচিক শাস্তি পাইয়াও, তাঁহার মুখে কোনও অভিযোগ অনুযোগ শুনি নাই; তাঁহার নিজেরই লজ্জা ও সঙ্কোচের অবধি ছিল না,—যেন তিনি যে অপরাধ করিয়াছেন, তাহার কোনও শাস্তিই অতিরিক্ত হইতে পারে না। সেদিন তাহাই দেখিয়া অবাক হইয়াছিলাম, পরে বুঝিয়াছি, আপনার অপরাধের শাস্তি তিনি আপনিই আপনাকে দিয়াছেন—পর যেন উপলক্ষ্য মাত্র; মানুষকে তিনি ক্ষমা করিয়াছিলেন, আপনাকে ক্ষমা করেন নাই। ইহাতেও তাঁহার শাস্তির শেষ হয় নাই— তিনি যখন মরিয়া গেলেন, তখন তাঁহার শবদেহ কেহ স্পর্শ করিল না, ডোমের সাহায্যে তাহা নদীতীরের এক জঙ্গলে টানিয়া ফেলিয়া দেওয়া হইল, শিয়াল কুকুরে তাহা ছিঁড়িয়া খাইল।” শরৎচন্দ্র চুপ করিলেন, ইহার পরে কয়েক মিনিট তিনি কথা কহিতে পারিলেন না। পরে ধীরে ধীরে বলিলেন, “মানুষের মধ্যে যে দেবতা আছে, আমরা এমন করিয়াই তাহার অপমান করি। রোহিণীর কলঙ্ক ও তাহার শাস্তিও এই পর্য্যায়ের, এমন একটা নারীচরিত্রের কি দুর্গতিই বঙ্কিমচন্দ্র করিয়াছেন!”

 গল্প শুনিয়া আমি অভিভূত হইয়াছিলাম—শুধু গল্প নয়—গল্প বলিবার আশ্চর্য্য ভঙ্গিতেও। সকল কবি কবিতা আবৃত্তি করিতে পারেন না—