পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
বিবিধ কথা

খণ্ডে ভ্রমরই সর্ব্বস্ব হইয়া উঠিয়াছে—রোহিণীর মূর্ত্তি যেন চিত্রশালার এক অন্ধকার কোণে স্থানান্তরিত হইয়াছে। আর্টিস্টের পক্ষে এ ত্রুটি অমার্জ্জনীয়। কিন্তু তাই বলিয়া রোহিণীর পরিণাম যে এইরূপ হইতে পারে না, তাহা যে মানবচরিত্র-জ্ঞানের বিরোধী, এ কথা বলিলে ভুল হইবে। কোন সংস্কারের বা সেণ্টিমেণ্টের কথা নয়—কোন সামাজিক ন্যায়-অন্যায়-বিচারের কথা নয়—বঙ্কিমচন্দ্রের রোমাণ্টিক কল্পনাও যে কবিদৃষ্টির গুণে এমন অসাধারণ সৃষ্টিশক্তির সাক্ষ্য দিয়াছে, তাহার অনুসরণ করিলে দেখা যাইবে যে, মাঝে আর দুই চারিটি দৃশ্য সন্নিবিষ্ট হইলে রোহিণীর জীবনে নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসই অতিশয় যথার্থভাবে ফুটিয়া উঠিত। রোহিণীর প্রতি আপনার যে শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি, তাহার কারণ, বঙ্কিমচন্দ্র তাহাকে সাধারণ নারীরূপে কল্পনা করেন নাই—আপনার নিরুদিদির মতই সে চরিত্রের একটা বৈশিষ্ট্য আছে। এইটুকু মহিমা বঙ্কিমচন্দ্রই তাহাকে দিয়াছেন, না দিলে আপনিও তাহার জন্য এত ক্ষুব্ধ হইতেন না। অতএব এজন্য প্রথমেই বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। রোহিণীর সেই বুদ্ধি ও চরিত্রশক্তি এবং তৎসহ তাহার প্রাণের সেই নির্দ্দোষ স্বাভাবিক প্রবৃত্তি যদি আমরা ভাল করিয়া বুঝিয়া থাকি, তবেই রোহিণীর পরিণাম সত্যকার ট্র্যাজেডির উপযোগী হইতে পারে। হইয়াছেও তাহাই, কেবল একটু অনবধানতার জন্য সেই ট্র্যাজেডি কতকটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়াছে—তাহা করুণ না হইয়া বীভৎস হইয়া উঠিয়াছে।

 রোহিণী-চরিত্রের মূল ভিত্তি একটু পরীক্ষা করা দরকার। যে হরলালকে ঘৃণার সহিত প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল, তাহার যেমন হউক