একটা ধর্ম্মবিশ্বাস ও আত্মমর্য্যাদাবোধ ছিল। গোবিন্দলালকে সে হৃদয়বান ও শক্তিমান আদর্শ পুরুষরূপেই আশ্রয় করিয়াছিল। ভ্রমরের প্রতি তাহার যে ঈর্ষা, অথবা ধর্ম্মজ্ঞানের অভাব, তাহা নিশ্চয়ই কুন্দ বা সূর্য্যমুখীর প্রতি হীরার ঈর্ষার মত নয়। ইংরেজীতে যাহাকে ‘grand passion’ বলে, সেই grand passion বা আত্মধ্বংসকারী প্রেম তাহাকে কতকটা নীতিভ্রষ্ট করিয়াছে সত্য—তথাপি তাহার চরিত্রের জন্মগত আত্মমর্য্যাদাবোধ তো মুছিয়া যাইবার নয়। তাহার প্রেমের মূলে সেই বিশ্বাস আছে—যে বিশ্বাসের বলে সে এতবড় সামাজিক সংস্কারকে লঙ্ঘন করিয়াছে। সেই grand passion ও মনের এই বিশ্বাস, এই দুইয়ের বলে সে অকূলে ভাসিয়াছে, মোহের মধ্যেও সে অন্তরের সত্যকে হারাইতে রাজি নয়। কবির ভাষায় বলা যাইতে পারে, “Her honour rooted in dishonour stood”। গোবিন্দলালের উপর তাহার বিশ্বাস এমনই যে, তাহাতে সে যদি ভুল করিয়া থাকে, তবে তাহার আর কোন আশ্রয় থাকিবে না; সে বিশ্বাস নষ্ট হইলে, তাহার জগৎ একেবারে অন্ধকার হইয়া যাইবে—দর্পণের পারাটুকু মুছিয়া যাইবে, সে দর্পণে কোন ছায়া আর পড়িবে না; ঘোরতর আস্তিক নাস্তিক হইলে যাহা হয়, তাহাই হইবে। আবার ইহাও মনে রাখিতে হইবে যে, রোহিণী মানুষ-হিসাবে ও নারী-হিসাবে জীবনে তাহার যে অধিকার চাহিয়াছিল—সে অধিকার সম্বন্ধে তাহার মনের জোর যতই থাকুক, হিন্দুর ঘরের ব্রাহ্মণের মেয়ের পক্ষে বৈধব্য-আদর্শের রক্তগত সংস্কার দমন করিতেই পারা যায়—উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। যদি কোন কারণে সেই বিশ্বাসের শক্তি আর না থাকে, গোবিন্দলালের মত পুরুষের দুর্ব্বলতায় তাহা ধূলিসাৎ হইয়া যায়—
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৭২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-পরিচয়
১৫৯
