অসঙ্গত নয়—রবীন্দ্রনাথের মত এত বড় প্রতিভার বিকাশ যে একটা অতি গূঢ় মূল ভাবকে আশ্রয় করিয়া আছে, এবং সর্ব্ববিধ বিবর্ত্তনের মধ্যে তাহাই যে কোন-না-কোন রূপে অভিব্যক্ত হইয়াছে—ইহাতে আশ্চর্য্য হইবার কি আছে? কিন্তু আমার মনে হয়, এই বিকাশের ধারা একটু স্বতন্ত্র—আদি হইতে শেষ পর্য্যন্ত তাহার রূপ এক নহে; কবির জীবন কাল-হিসাবে যতই অগ্রসর হইয়াছে, ততই যে তাহা আপনাকে একই ধারায় উত্তরোত্তর প্রকাশিত করিয়াছে, তাহা নহে; মূল ভাববীজ এক হইতে পারে, কিন্তু তাহা একই বৃক্ষরূপে শাখাপ্রশাখা বিস্তার না করিয়া, সেই বীজেরই আদি-প্রকৃতি অনুসারে নিরন্তর নব নব রূপে অঙ্কুরিত হইয়াছে। এইরূপ একটা ধারণা রবীন্দ্রনাথের কবিজীবনের ইতিহাস পর্য্যালোচনা করিলে অনিবার্য্য হইয়া উঠে। বীজ একই বটে—কিন্তু তাহার বিকাশের যে নানা ভঙ্গি কালে কালে প্রকাশ পাইয়াছে, তাহাতে কোনও একটি তত্ত্বের শাসন অপেক্ষা কবিমানসের স্বাধীন স্বচ্ছন্দ লীলাই প্রকট হইয়াছে। তত্ত্ব যদি কিছু থাকে তবে তাহা সকল তত্ত্বনিরসনের তত্ত্ব—সর্ব্ববন্ধন সর্ব্বসংস্কার হইতে ক্রমাগত মুক্তিলাভের আগ্রহ। রবীন্দ্রনাথের কাব্যে যাঁহারা কোনও তত্ত্বের সন্ধান করিবেন, যাঁহারা পূর্ব্বাপর সমস্ত কবিতাগুলিকে একটি কোনও সুদৃঢ় সূত্রে গাঁথিয়া মাল্যের আকারে গ্রন্থিবদ্ধ করিবেন— তাঁহারা এমন একটি নীতির প্রতিষ্ঠা করিতে বাধ্য হইবেন, যাহা জীবন বা কাব্য কোন হিসাবে সত্য নহে।
আমি এরূপ কোনও তত্ত্বের সূত্র ধরিবার চেষ্টা করিব না, বরং ধারা যে সর্ব্বত্র এক নহে, তাহাতে স্পষ্ট বিচ্ছেদ আছে, কবিজীবনের পূর্বার্দ্ধ শেষাৰ্দ্ধ সুস্পষ্ট ভেদরেখায় বিভক্ত হইয়াছে—সেই কথাই বলিৰ।