পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৪
বিবিধ কথা

কবি-হিসাবে রবীন্দ্রনাথের কীর্ত্তি ইহার কোন্ ভাগে অধিকতর সার্থক হইয়াছে, এবং কেন হইয়াছে,—কোন্ ভাগে তাঁহার ব্যক্তিমানসের সুস্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়, সেই সম্বন্ধে সংক্ষেপে কিছু বলিব। যে একটি বস্তু রবীন্দ্রনাথের কবিজীবনকে এমন অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্য দান করিয়াছে, আমি তাহার নাম দিব—আনন্দ-মুক্তির প্রেরণা। রবীন্দ্রনাথ সারা জীবন ধরিয়া যে গান গাহিয়াছেন, সেই গানের সুরই তাহার প্রাণের সুর—এই সুর একান্তই তাঁহার নিজের। এই গানের সুরেই সেই আনন্দ-মুক্তির আকুল আগ্রহ বরাবর একভাবে প্রকাশ পাইয়াছে। তাঁহার জীবনের শ্রেষ্ঠ সাধনা এই গানেই আরম্ভ, গানেই শেষ। এক হিসাবে এই গানগুলির কথা ও সুর তাঁহার প্রতিভার সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এই গানের মধ্যেই কবিজীবনের আদ্যন্ত সুপরিস্ফুটরূপে প্রকাশ পাইয়াছে। কবিপ্রাণের আদি-প্রেরণা ও তাহার বিকাশের অখণ্ড ধারা যদি কোথায়ও থাকে, তবে এই গানগুলির ভিতরেই তাহা ব্যাপ্ত হইয়া আছে। রবির উদয়কালে যে বর্ণচ্ছটা পূর্ব্বাকাশ রঞ্জিত করিয়াছিল, এখনও সেই নানা বর্ণের গীত-গরিমায় অস্ত-গগন ভরিয়া উঠিয়াছে। প্রভাতে মধ্যাহ্নে ও অপরাহ্নে রবির প্রতিভা উর্দ্ধাকাশের সেই নীল শূন্য ত্যাগ করিয়া পৃথিবীপৃষ্ঠে অবতরণ করিয়াছিল, এবং আপন আলোকে পৃথিবীর রূপ, রঙ, রেখাকে উজ্জ্বল করিয়াছিল। ইহাই ছিল কবির কাব্যসাধনা—ইহা গীত-সাধনা নয়। আমি যে পূর্ব্বার্দ্ধ ভাগের কথা বলিয়াছি, তাহাই কবি রবীন্দ্রের কাব্যসৃষ্টির যুগ। রবীন্দ্রনাথের গীতি-প্রকৃতিকে যদি তাঁহার কবিপ্রকৃতি হইতে পৃথক করিয়া দেখা সম্ভব হয়, তবেই রবীন্দ্রনাথের কবিজীবনের আদ্যন্ত বুঝিবার পক্ষে বাধা ঘটিবে না, এবং সেই জীবনের পরিচ্ছেদগুলি বিভক্তভাবেই