পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ কথা

সেই নবজাগরণের মধ্যাহ্ন-দিবালোকে, আমি জন্মিয়াছিলাম বঙ্কিম-বিবেকানন্দ-বিদ্যাসাগরের যুগে। তেমন যুগ যে-কোন জাতির ইতিহাসে একটা গৌরবময় যুগ; সে যুগে জ্ঞান কর্ম্ম ও প্রেমের মানুষী-সাধনার জন্য বাংলা দেশে যেন দেবকুল অবতীর্ণ হইয়াছিলেন। অসংখ্য সাধকের মধ্য হইতে বাঙালী-প্রতিভার এই তিন চূড়া সেদিন বাংলা দেশের আকাশ স্পর্শ করিয়াছিল; এই তিন যুগন্ধরই বাঙালী জাতির জন্য বৃহত্তর জীবনের ভিত্তি স্থাপন করিয়াছিলেন—ইঁহাদের সহিত সেকালের আর কাহারও তুলনা হয় না। তাই বলিয়া আমি অপর কোন বিশিষ্ট প্রতিভার অসম্মান করিতেছি না। বাংলার উনবিংশ শতাব্দীতে বহু মনীষীর আবির্ভাব হইয়াছিল—তাঁহাদের সাধনমন্ত্র ও সাধনক্ষেত্র সকলের এক ছিল না; না থাকিলেও কেহ কেহ বিশেষ ক্ষেত্রে অপর সকল অপেক্ষা প্রতিভায় শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য হইতে পারেন; এবং সে প্রতিভা বাঙালীরই, অতএব বাঙালীমাত্রেরই নমস্য। আজ আমি যাঁহাদের বন্দনা করিতেছি, তাঁহাদের প্রতিভার শ্রেষ্ঠত্বই তাহার একমাত্র কারণ নয়—উৎকৃষ্ট চিন্তা, অসাধারণ মেধা বা দৃষ্টিশক্তির তীক্ষতাই তাঁহাদের মহত্ত্বের কারণ নয়। তাঁহাদের সেই প্রতিভার সঙ্গে প্রেম ছিল। কেবল মস্তিক্ষচর্চ্চার মৌলিকতা বা আত্মমতনিষ্ঠার নির্ভীকতাই নয়,—সেই আত্মগত অভিমান অপেক্ষা, তাঁহারা জাতিগত চেতনার উৎকণ্ঠায় অধিকতর উদ্বুদ্ধ হইয়াছিলেন। সাধারণ জনগণের পথেই পথিকের হৃদয়মনের সঙ্গে আপনার হৃদয়ের যোগ রক্ষা করিয়া, তাঁহাদের কেহ—সমাজ ও শিক্ষা, কেহ—পৌরুষ ও উচ্চাভিলাষ, কেহ বা—আধ্যাত্মিক কল্যাণ, এই ত্রিবিধ মার্গের উন্নতিসাধনে প্রাণের সকল শক্তি প্রয়োগ করিয়াছিলেন। তাঁহাদের প্রতিভার সঙ্গে মহাপ্রাণতার যে অগ্নিদীপ্তি ছিল—হৃদয়ের