সীমা নাই, শেষ নাই। এককালে তিনি তাঁহার কাব্যসুন্দরীকে যে প্রশ্ন করিয়াছিলেন—
আর কত দূরে নিয়ে যাবে মোরে হে সুন্দরী?
বল কোন্ পার ভিড়িবে তোমার সোনার তরী!
যখনি শুধাই, ওগো বিদেশিনী,
তুমি হাস’ শুধু মধুরহাসিনী,
বুঝিতে না পারি, কি জানি কি আছে তোমার মনে।
নীরবে দেখাও অঙ্গুলি তুলি’
অকূল-সিন্ধু উঠিছে আকুলি’
দূরে পশ্চিমে ডুবিছে তপন গগন-কোণে।
কী আছে হোথায়—চলেছি কিসের অন্বেষণে?
হোথায় কি আছে আলয় তোমার
ঊর্ম্মিমুখর সাগরের পার,
মেঘচুম্বিত অস্তগিরির চরণতলে?
তুমি হাস’ শুধু মুখপানে চেয়ে কথা না ব’লে।
—সে প্রশ্ন এখনও শেষ হয় নাই, কখনও হইবার নয়। এই যে সোনার তরী বাহিয়া তিনি চলিয়াছেন সে চলার অন্ত নাই—এখানে যাহা প্রশ্ন, ‘বলাকা’য় তাহাই উত্তর হইয়া উঠিলেও, এ রহস্যের শেষ নাই; তাই এই প্রশ্ন ও উত্তরের অশেষ ভঙ্গিই রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রেরণার উপজীব্য হইয়া তাঁহাকে চিরজীবী করিয়াছে।
এককালে তিনি সংসারের তথা মানবহৃদয়ের বিচিত্র পথঘাট পরিভ্রমণ করিয়াছিলেন—মুক্তি-পিপাসা লইয়াই নানা বন্ধন স্বীকার