যে সত্যকার কাতরতা ছিল, তাহাতেই জাতির প্রাণে সাড়া জাগিয়াছিল, সাম্প্রদায়িক চিত্তোৎকর্ষ নয়—সার্ব্বজনীন চেতনার উন্মেষ হইয়াছিল। তাই আজিকার দিনে এই তিন মহাপুরুষের মাহাত্ম্যই ধ্যান করিতে হইবে; তাহাতে এই পরম সত্যের উপলব্ধি করিব যে, ব্যক্তিবিশেষের বিবেক বা আত্মগত সত্যের আদর্শ যত বড় হউক, তাহাতে জাতির কল্যাণ হয় না; কোন একটা আইডিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব মনে মনে স্বীকার করিলে এবং তাহাই প্রচার করিলে, এই একান্ত দেহদশাধীন মানুষের মৃত্যুভয় নিবারিত হয় না। আজ ইহাই প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিয়াছে যে, নিশ্চিত্র যুক্তি, অত্যুচ্চ ভাব, নিরপেক্ষ সত্য— এ সকলের মূল্য বিশ্বজীবনের পক্ষে এবং ব্যক্তির আত্মার পক্ষে যতই কল্যাণকর হউক, জাতির জীবনে তাহার অতিরিক্ত অনুশীলন তীব্র বিষের মতই ভয়াবহ। আমি আজ যাঁহাদের নাম লইতেছি, তাঁহাদের সাধনা ও সিদ্ধির কথা ভাল করিয়া চিন্তা করিলে দেখা যাইবে, তাহার মূলে ছিল—পরার্থে আত্মোৎসর্গের আকাঙ্ক্ষা; ‘আমি’ নয়, ‘তুমি’— ব্যক্তি নয়, জাতিই ছিল তাহার মূলমন্ত্র।
আজিকার এই সাহিত্য-সভায় আমি যে অসাহিত্যিক প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়াছি, তাহার কৈফিয়ং ইতিপূর্ব্বে দিয়াছি। তথাপি আমার এ চিন্তা যে একেবারে সাহিত্যসম্পর্কবজ্জিত নয়, তাহার আভাসও আপনারা পাইয়াছেন। দূর ও নিকট ভবিষ্যতের কথা ভাবিতে না পারিলেও, জাতির এই জীবন-মরণ সঙ্কটের দিনে, আমি যে মৃত্যুঞ্জয়-মন্ত্রের সন্ধান করিয়াছি, তাহার নির্দ্দেশ ও আশ্বাস গত যুগের সাধনার ইতিহাসে আছে। সে ইতিহাস মুখ্যত ভাবসাধনার ইতিহাস, এবং সেজন্য তাহার অধিকাংশ সাহিত্য হইলেও, তাহাতে এই জাতির