মৃত্যু-দর্শন
মৃত্যুর কথা কেহ ভাবে না, এ কথা সত্য—ভাবিলে মানুষের পক্ষে বাঁচাই কঠিন হইত।
কিন্তু না ভাবিয়া থাকে কেমন করিয়া? জীবনের মোহ-রসে আচ্ছন্ন থাকে—মৃত্যু-বিভীষিকা সে মোহ ভেদ করিতে পারে না। বাঁচিয়া থাকিতে হইবে; সে বাঁচা দিন হইতে দিনে, বা বৎসর হইতে বৎসরে নয়—পলে অনুপলে; তাই মৃত্যুকে দেখিলেই সে পাশ কাটায়, বেশিক্ষণ তাহার দিকে তাকাইতেও পারে না। মানুষের জীবধর্ম্ম এতই প্রবল, দেহের অণু পরমাণু এত চঞ্চল যে, থামিবার ভাবিবার অবকাশ তাহার নাই। সে যে মুখে ছুটিতেছে তাহার বিপরীত মুখে মৃত্যু তাহার পাশ দিয়া ছুটিয়া যাইতেছে, উভয়ে চক্রাকারে ছুটিতেছে—যখনই দেখা হয় শিহরিয়া উঠে; কিন্তু গতির বিরাম নাই, ঘুরণের নেশায় মৃত্যুকে আমরা দেখি না। যখনই সংঘর্ষ ঘটিবে তখনই চুরমার হইয়া যাইবে এ কথা সে জানে, কিন্তু ঘূর্ণনের মুখে তাহা মানে না। ইহারই উল্লেখ করিয়া মহাভারতকার যুধিষ্ঠিরের মুখ দিয়া বলাইয়াছিলেন, ‘কিমাশ্চর্য্যমতঃপরং’।
মৃত্যুকে ভাবিতে পারা যায় না; আর সব-কিছু মানুষের জ্ঞানগম্য—পরোক্ষ অনুভূতির বিষয়, কিন্তু মৃত্যুকে সাক্ষাৎ করিতে না পারিলে তাহার পরিচয় করা হয় না; এবং সাক্ষাৎ করিলে আর কিছু বলিবার থাকে না। অস্তিত্বের বিলয়-মুহূর্ত্তে যে অপরোক্ষ অনুভূতি ঘটে, তাহা বজ্রাঘাতের মত; নিমেষের মধ্যে মহাশূন্য জাগিয়া উঠে—তাহাতে দিক-কাল নাই, অগ্রপশ্চাৎ নাই, স্মৃতি-বিস্মৃতি নাই; সেই