হইয়া যায়, ভিতরে পক্ষাঘাত হয়—যাবজ্জীবন সে অজ্ঞানে ও সজ্ঞানে সেই পক্ষাঘাত বহন করে।
ইহারই নাম মৃত্যুর সহিত সাক্ষাৎকার—নিজ মৃত্যুর পূর্ব্বে মানুষ মৃত্যুকে আর কোনও রূপে দেখিতে পায় না। সাধারণত মৃত্যুকে আমরা জানি না, জানিতে চাই না—জীবিতের পক্ষে অপরের মৃত্যু একটা অর্থহীন দুর্জ্ঞেয় উপদ্রবমাত্র; যতক্ষণ বাঁচিয়া আছি ততক্ষণ মৃত্যুকে স্বীকার করা অসম্ভব—মৃত্যুকে স্বীকার করাই মরা। স্বীকার এক রকম করি—যখন বুকের পাঁজর কয়খানার কোনটা খসিয়া যায়; তখন নিজের মনের মুকুরে নিজের সেই লাঞ্ছিত হতশ্রী মূর্ত্তি দেখিয়া মুখ লুকাই, সে মুখ কাহাকেও দেখাইতে লজ্জা হয় না; মানুষের সভায় যখন বসি তখন প্রাণপণে নিজের সেই ক্ষতিচিহ্ন লুকাইয়া রাখি। যে শোক করে, সে মানুষের সান্ত্বনা সহানুভূতি চায়, সে জীবনের দুয়ারে ভিক্ষা করিয়া মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ করিয়া লইতে চায়—সে মৃত্যুকে দেখে নাই।
জীবনে যাহার মৃত্যুর সঙ্গে সাক্ষাৎকার হয় নাই—সে ভাগ্যবান, যে তাহাকে দেখিয়াও দেখে নাই—সে হৃদয়হীন। যে মৃত্যুর অন্তরালে পরম আত্মাকে আবিষ্কার করে, মৃত্যুকে যে অমৃতের সোপান বলিয়া উপলব্ধি করে, মৃত্যু কোথাও নাই বলিয়া যে ঘোষণা করে, সে—হয়, জানিয়া শুনিয়া মধুর মিথ্যার প্রশ্রয় দেয়; নয়, সে কখনও বাঁচে নাই—দেহ পরিগ্রহ করিয়াও বিদেহ অবস্থায় আছে, অর্থাৎ সে প্রেত-পিশাচের সামিল। মানুষ যতক্ষণ মানুষ, ততক্ষণ সে তাহার ব্যক্তিপরিচ্ছিন্ন সত্তা বিস্মৃত হইতে পারে না—সেই সত্তার উপরে যে ব্যক্তিত্বহীন অমৃতসত্তার আরোপ করিয়া আশ্বস্ত হইতে চায় তাহার আত্মপ্রবঞ্চনা কৃপার উপযুক্ত বটে। কিন্তু যে সেইরূপ আশ্বাসে আশ্বস্ত হইতে পারে সে