মৃত্যু জীবনের উপরে রেখাপাত করিতে পারে না। মৃত্যুর সম্বন্ধে শিশুর যে মনোভাব—নিত্যসঙ্গীরও অকস্মাৎ তিরোধানে শিশুর যে আচরণ—বয়স্ক ব্যক্তির আচরণও তাহাই, মূল জীবন-চেতনার বা সত্যকার জীবন-ধর্ম্মের তাগিদে আমরা মৃতজনকে আমাদের জগৎ হইতে একেবারে নির্ব্বাসিত করিয়া দিই; অমৃতের আশ্বাস, ধর্ম্মের সান্ত্বনা, পরলোকের কাহিনী-কল্পনা—এ সকলই তাহার প্রমাণ। মৃতজন আমাদের প্রাণের সন্নিকটে আর বাস করে না; আমাদের প্রাত্যহিক সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাহাদের কোনও যোগ নাই। যাহার কায়া নাই তাহার সঙ্গে দেহধারীর কোনও সম্পর্ক থাকিতে পারে না—তাই থাকেও না; তথাপি যে সম্পর্কের দাবি করি তাহা ভান মাত্র; তাহা যে সত্য নয় তাহার প্রমাণ সর্ব্বত্র; মানুষের জীবনযাত্রা লক্ষ্য করিলেই বুঝিতে পারিবে মৃতজনের সম্বন্ধে কোনও চেতনা, কোনও সজ্ঞানতা, তাহার মধ্যে কুত্রাপি নাই। শিশুর আচরণ অবিমিশ্র সত্য, তাহাতে ভান নাই; বয়স্ক ব্যক্তির স্মৃতি নামক একটা মানস-ব্যাধি আছে—হয়তো লজ্জাও আছে, তাই সে মাঝে মাঝে স্মরণ করে, দুঃখ করে, লজ্জা পায়।
মানুষ আপনার চেয়ে কাহাকেও ভাল বাসে না; যদি কাহাকেও খুব ভাল বাসে, তবে তাহা আপনার চেয়ে নয়—আপনার মত। তাই স্নেহ যত গভীর হউক, প্রেম যত বড় হউক, তার মূলে স্বার্থ থাকে। পরের জন্য আপনাকে হত্যা করা—পরের মৃত্যুতে নিজের জীবন-সংকোচ করা জীবের ধর্ম্ম নহে, মানুষের মত শ্রেষ্ঠ জীবেরও নহে। যে মরিয়া গেল তাহাকে ভাল বাসিতাম, খুব ভাল বাসিতাম—তাহার অর্থ, আমার প্রীত্যর্থে তাহাকে প্রয়োজন ছিল; তাহার মৃত্যুতে