পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃত্যু-দর্শন
১৯৯

যে আয়ু আমি এখনও ভোগ করিতেছি—শোকের আবেগে নিজের সেই আয়ুকে যতই ধিক্কার দিই না কেন, অন্তরের অন্তরে যাহার মূল্য সম্বন্ধে আমি সচেতন—সেই আয়ু—অস্তিত্বের সেই একমাত্র স্বাদ-সুখ হইতে যখন তাহাকে বঞ্চিত হইতে দেখি, তখন কপট বৈরাগীর মত, নিজে গোপনে ভোগসুখে আসক্ত থাকিয়া অপরের সম্বন্ধে সুমহান বৈরাগ্যের আদর্শ প্রচার করার মত, নিজে জীবিত থাকিয়া মৃতের জন্য আত্মা বা পরলোকের ব্যবস্থা করিতে প্রবৃত্তি হয় না। তখনই মৃত্যু কি, তাহা বুঝিতে পারি। যখন জীবন-বঞ্চিত হতভাগ্যের সেই দুঃখ অনুভব করি— আমার অভাব নয়, তাহার সেই অভাব—সেই সব-শেষ-হওয়ার মহা দৈন্য যখন উপলব্ধি করি, তখন এক দিকে জীবনকে যেমন পরম আশীর্ব্বাদ বলিয়া বুঝি, তেমনই, আর এক দিকে মৃত্যু যে কত বড় অভিশাপ, তাহাও অন্তরে অন্তরে অনুভব করি।

 পরক্ষণেই মনে হয় যে রহিল না, যে আর নাই, তাহার জন্য দুঃখ কি?—দুঃখ তাহার, না তোমার? জীবন-বঞ্চিত হইয়াছে কে? ‘হইয়াছে’ কথাটা যাহার সম্বন্ধে খাটে তাহার একটা সত্তা মানিতে হয়— কিন্তু সে যে নাই! মৃত্যু যে মহা অবসান—চির সমাপ্তি! তখন বুঝি, দুঃখটা আমার—আমারই সম্পর্কে, আমারই স্বার্থজড়িত। শোক করিতে গিয়া মনের মধ্যে বাধা পাই। চোখ ফাটিয়া যে অশ্রুর উদ্গম হয়, তাহার হেতুরূপে আমা ছাড়া আর কাহাকেও খুঁজিয়া পাই না।

 তখন বুঝিতে পারি, যাহার শব-দেহ বার বার বক্ষে ধারণ করিতেছি—সে আর নাই বটে, তবু আমার জীবনে তাহার জীবনের রেশ রহিয়াছে—আমি যে আছি! এই যে ‘সে নাই’ ভাবিতেছি ইহা তো আমারই ভাবনা, ‘না থাকা’ যে কি, তাহা যে নাই সে তো আর বুঝে না;