পারিবে, থাকা অর্থে তুমি যাহা অনুভব কর, তোমার যে একমাত্র সহজ ব্যক্তি-চেতনা ব্যতীত আর সকলই তোমার সংস্কার-বিরোধী—যাহাকে ছাড়িয়া আর কিছুর ভাবনা তোমার সত্যকার ভাবনা হইতেই পারে না—তাহা যে মিথ্যা, অর্থাৎ তুমি থাকিবে না, তোমার সে অস্তিত্ব একেবারে লোপ পাইবে—এ কথা দার্শনিক মাত্রেই স্বীকার করিবে; কিন্তু তাহার স্থানে একটি অতি বিশুদ্ধ অস্তিত্ব, একটি নামগোত্রহীন সত্তার আশ্বাসে তোমাকে আশ্বস্ত হইতে হইবে—ইহারই নাম আস্তিকতা। যাহারা নাস্তিক্যবাদী তাহাদের মতের সঙ্গে এই মতের বিশেষ পার্থক্য নাই; যাহা কিছু পার্থক্য—সে কেবল চিন্তাপ্রণালীর সুক্ষ্ম কৌশল-ভেদ। ইহাদের নিকট মৃত্যু সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেই দেখিবে, ইহারা সহজভাবে তাহার উত্তর দিবে না—যেন প্রশ্নটা নিতান্তই স্থূল। তাহার কারণ, তাহারাও মৃত্যুকে দেখিবার সাহস করে না, প্রাণের অনুভূতিকে জ্ঞানের দ্বারা রোধ করিয়া মনস্বিতার নামে অন্যমনস্ক হইতে চায়। আসল কথা, তাহারাও মানুষ—জীবধর্ম্মী; মৃত্যুর স্বরূপচিন্তা তাহাদেরও সংস্কার-বিরোধী।
মনে কর, কোনও বড় কর্ম্মী বা জ্ঞান-বীরের শেষ মুহূর্ত্ত উপস্থিত। মৃত্যুর আক্রমণে দেহ বিবশ, মুহুর্মুহু আক্ষেপ হইতেছে—মুখ বিবর্ণ ও বিকৃত, চেতনা আচ্ছন্ন, চক্ষুতারকা দৃষ্টিহীন। সে সময়ে, সে ব্যক্তির মহত্ত্ব, তাহার কীর্ত্তি বা তপস্যা-গৌরব স্মরণ করিয়া—তাহার সেই মৃত্যুমলিন দীন কাতর মূর্ত্তির প্রতি করুণা অনুভব না করিয়া পার? ভাল করিয়া তাহার সেই মৃত্যুযাতনাক্লিষ্ট নিশ্বাস, দেহের সেই অন্তিম মিনতিপূর্ণ আবেদন যদি বুঝিয়া থাক, তবে মহান আত্মা বা মহতী কীর্ত্তির এই অবশ্যম্ভাবী পরিণাম নিরীক্ষণ করিয়া, এই ভাবিয়া আশ্বস্ত