পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃত্যু-দর্শন
২১১

দাঁড়াইয়া আছে—কোনও জিজ্ঞাসার অবসর সেখানে নাই। সে উপায় নাই বলিয়া মানুষ দর্শন-শাস্ত্র রচনা করিয়াছে, অর্থাৎ এক-তরফা আপন মনে বকিয়া চলিয়াছে—কিন্তু মহাকাল তেমনই নীরব। যে কলস শূন্য তাহাকে উল্টাইয়া নিঃশেষ করা যেমন অসম্ভব, তেমনই যে তত্ত্ব মূলেই নাস্তি, তাহার সন্ধান শেষ হইতে পারে না। তাই, সন্ধানের বস্তুটার চেয়ে সন্ধানের নেশাটাই বড় হইয়া উঠিয়াছে; তাহার কারণ, সত্য মানেই ধ্বংস, প্রলয়, শেষ,—নেশাই জীবন। এ নেশা ভাঙিতে চাহিবে কে? অর্থোপার্জ্জন যেমন নেশা, ধর্ম্মোপার্জ্জন যেমন নেশা—বিদ্যা-উপার্জ্জন বা তত্ত্ব-চর্চ্চাও সেইরূপ নেশা। যে সত্যের পিছনে মানুষ যুগ যুগ ধরিয়া ছুটিতেছে তাহাকে পাইতে হইলে সকল নেশা ত্যাগ করিতে হয়; চক্ষুর দৃষ্টি—দূরে নয়—নিকটে সংলগ্ন করিতে হয়; জ্ঞানের অভিমান নয়—প্রাণের ঐকান্তিকতা অর্জ্জন করিতে হয়। যাহাকে শিকার করিয়া ধরিতে চাও সে শিকারের বস্তু নয়, জ্ঞান-বুদ্ধির নিশিত শরও তাহাকে বিদ্ধ করিতে পারে না; সে ধরা দেয় স্বেচ্ছায়— সে বাস করে হৃদয়ের অতি সন্নিকটে। সমস্যার সে গ্রন্থি অতি সরল; তাহাকে খুলিতে হইলে অতি লঘুস্পর্শ অঙ্গুলির চকিত প্রয়োগই যথেষ্ট, বল প্রয়োগ করিলেই সে বন্ধন বজ্রকঠিন হইয়া উঠে। মৃত্যু আমাদের প্রাণের অতি সন্নিকটে বাস করিতেছে, তাহাকে আমরা অহরহ দেখিতেছি তথাপি তাহাকে চিনি না কেন? চিনিলে যে আমাদের নেশা ছুটিয়া যায়! আমরা গ্রন্থির উপর গ্রন্থি বাঁধিয়া নেশা বজায় রাখিয়াছি, পাছে সকল রহস্যের মূল এই মৃত্যু অতি সবল হইয়া আমাদের হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করে তৎক্ষণাৎ সকল আশা সকল সংশয় ছুটিয়া যায়। যাহা চরম সত্য তাহাই পরম সরল—যাহা