পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
বিবিধ কথা

নাম—দেশ; বিগ্রহপূজক হিন্দুর জন্য তিনি এমন এক বিগ্রহ নির্ম্মাণ করিলেন, যাহা কোন আধ্যাত্মিক তত্ত্বের প্রতীক নয়; জীবনে প্রতি পদে যাহার সহিত পরিচয়, যাহার মূর্ত্তি রসে ও রূপে সহজে হৃদয়গোচর হয় বলিয়াই সকল কর্ম্মপ্রচেষ্টার সাক্ষাৎ উৎস-স্বরূপিণী হইবার যোগ্য,তাহাকেই তিনি আপন প্রতিভাবলে বাঙালীর একমাত্র ইষ্টদেবতারূপে স্থাপন করিলেন। এ ধর্ম্মেরও মূলে রহিয়াছে সেই এক প্রেরণা—মানব-প্রেম ও মানব-সেবা, সমষ্টির জন্য ব্যাষ্টির আত্মবিসর্জ্জন—সকল অহঙ্কার বা আত্মমমতার উচ্ছেদ। ইহার পর, সে যুগের সেই নব প্রেরণাই বিবেকানন্দে আরও প্রখর উর্দ্ধশিখায় জ্বলিয়া উঠিল; তাহাতে ভারতীয় অধ্যাত্মবাদকে অস্বীকার না করিয়া—তাহাকে যেন বিপরীত মুখে উলটাইয়া ধরিয়া— অতি তীব্র আধ্যাত্মিক পিপাসাকেই মানব-প্রেমের আকারে শোধন করিয়া লওয়া হইল। আশ্চর্য্য নয় কি? এই তিন মহাপুরুষের জীবনে সেই এক বাণীই বিভিন্ন রূপ ধারণ করিয়াছিল। সে বাণী এই যে—মানুষের চেয়ে বড় আর কিছু নাই; পুরুষের পরম পুরুষার্থসাধনের ক্ষেত্র এই ইহলোক—এই জগৎ ও জীবন; মানুষের মত বাঁচিতে হইলে মানুষকে শ্রদ্ধা করিতে হইবে, সেই শ্রদ্ধা প্রেমে ও সেবায় সার্থক করিয়া তুলিতে হইবে; আত্মচিন্তা ও আত্মসাধনা সকল অনর্থের মূল; পরের জীবনে আপন জীবন মিলাইয়া ধন্য হও—অহংচেতনাকে খর্ব্ব কর। এই তিন জন তিন রূপে এই বাণীকে রূপ দিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর কোন তত্ত্বচিন্তা বা ঐতিহাসিকতার ধার ধারিতেন না। সাক্ষাং যথাপ্রাপ্ত জগতে অতিশয় নিকট ও প্রত্যক্ষ যাহা, তাহারই উপরে তিনি যেন অন্ধবিশ্বাসে আপনার হৃদয়-মনকে প্রচণ্ডভাবে প্রয়োগ করিয়াছিলেন। তাঁহার নিকটে বাঙালীও কেবল মানুষ—বাঙালীজাতি বলিয়া কোন