পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙালীর অদৃষ্ট
২১৭

পরিবর্ত্তে বিশ্বাসের শাসন—এই সকলের সম্মুখে তাহার জাতীয় জীবনের বিকাশপথ কতকটা রুদ্ধ হইয়া আসিল। প্রায় ছয় শত বৎসর ধরিয়া বাঙালী আপনার সমাজ, ধর্ম্ম ও ভাষাকে এই একাস্ত অনাত্মীয় পরধর্ম্মের সংঘাত হইতে বাঁচাইবার চেষ্টায় ব্যাপৃত হইয়া রহিল। এই কালে সে আপনার ধারা ত্যাগ করিয়া প্রাচীন ভারতীয় ভাব, ভাষা ও চিন্তাকে অবলম্বন করিয়া অতিমাত্রায় রক্ষণশীল হইয়া উঠিল; তাহার নিজস্ব স্বপ্ন-কল্পনার ভাবাবেগ—ভারতীয় সাহিত্য, দর্শন ও সমাজনীতির আদর্শে—একটা নূতন আকার ধারণ করিল। ইতিমধ্যে তাহার নিজ ভাষা গড়িয়া উঠিয়াছে, কিন্তু সে ভাষায় প্রবল প্রাণের স্ফূর্ত্তি নাই; পাঁচ শত বৎসরেও এমন একজন কবি জন্মিল না যাহার বাণীতে হিমালয়ের বিরাট গাম্ভীর্য্য অথবা বঙ্গোপসাগরের তরঙ্গোচ্ছ্বাস প্রতিফলিত হইতে দেখা যায়। এককালে পৃথিবী যাহার গৃহপ্রাঙ্গণ ছিল, গিরিলঙ্ঘন ও সমুদ্রপারাপার যাহার নিত্যকর্ম্ম ছিল, সে এক্ষণে আম্রবনচ্ছায়ে সুপ্ত, গুপ্ত, অথবা লুপ্ত হইয়াই রহিল! তাহার গানে ছন্দের পক্ষবিস্তার নাই, তাহার কাব্যে কল্পনার নিরুদ্দেশ-যাত্রা নাই। কতকগুলি গ্রাম্য-গীতি ও গাথা, এবং গৃহদেবতার মহিমাবর্ণনই তাহার প্রতিভার শেষ নিদর্শন। মনে হয়, এ কোন্ জাতি? মুসলমান-পূর্ব্ব ইতিহাসে, বৌদ্ধ-হিন্দুর নবসমন্বয়ের যুগে, যে জাতির নানা কীর্ত্তির স্পষ্ট ও অস্পষ্ট সংবাদ ঐতিহাসিকের বিস্ময় উৎপাদন করে—সেই জাতি, অবশেষে, এক দিকে তাহার স্বাধীন ভাব-সাধনা গুহ্য তান্ত্রিক অনুষ্ঠানে চরিতার্থ করিতেছে; অপর দিকে আত্ম-বিশ্বাস হারাইয়া, জাতি-ধর্ম্ম বিসর্জ্জন দিয়া, সমাজে, ধর্ম্মে ও চিন্তাপদ্ধতিতে ব্রাহ্মণ্য আদর্শের প্রতিষ্ঠায় উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে! সংস্কৃত ভাষায় তাহার নিজ ভাষার