পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙালীর অদৃষ্ট
২১৯

মানুষমাত্রের প্রতিই শ্রদ্ধা—তাহাকে ভিতরে ভিতরে অভিভূত করিতেছিল। এই ভাব হিন্দুভাবুকতায় মণ্ডিত ও তান্ত্রিক সহজিয়া তত্ত্বে রঞ্জিত হইয়া একটি বিশিষ্ট ভাবধারার প্রতিষ্ঠা করিল। ইহাই মধ্যযুগের বাঙালীজাতির বাঙালিয়ানার নিদর্শন, ভারতীয় কাল্‌চারে তাহার সর্ব্বশ্রেষ্ঠ দান। শ্রীচৈতন্যেরও এক শত বৎসর পূর্ব্বে মানুষের সুগভীর মনুষ্যত্বই বাঙালী কবির ধ্যানের বস্তু হইয়া উঠিয়াছিল; মানুষের দেহ-মন-প্রাণের রহস্যনিকেতনেই সুন্দর-দেবতার যে অপরূপ লীলা বাঙালী-কবিকে পুলক বিস্ময়ে অভিভূত করিয়াছিল, এবং তাহারই আবেগে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তনে’র কৃষ্ণতত্ত্ব যে নরত্ব-মহিমায় উজ্জ্বল হইয়া উঠিল— ভারতীয় কাব্যে তাহার তুলনা নাই। কিন্তু এই ‘রসতত্ত্ব’ হইতে যে প্রেমধর্ম্মের উদ্ভব হইয়াছিল, তাহার ধারা প্রতিকূল ব্রাহ্মণ্য-প্রভাবে ভিন্নমুখে প্রবাহিত হইয়া পূর্ণ পরিণতি লাভ করিতে পারে নাই— সে সাধনা জীর্ণ পরিত্যক্ত খোলসের মত আজিও সমাজের অঙ্গে জড়াইয়া আছে। সেই একবার বাঙালী আপনাকে চিনিয়াছিল, তাহার আত্মস্ফূর্ত্তি হইয়াছিল; কিন্তু তাহার সে স্বপ্ন টি কে নাই। তখন শাক্তধর্ম্ম ও ব্রাহ্মণ্য-সংস্কারের প্রয়োজনই ছিল অধিক। মুসলমান ধর্ম্মের প্রবল সংঘাতে তাহার ক্রমাগত কুলক্ষয় হইতেছিল, তাই আত্মরক্ষার জন্য সে যে নীতি ও আদর্শের আশ্রয় লইল, তাহাতে কোনরূপে টিকিয়া থাকিবার উপায় হইল বটে, কিন্তু সত্যকার প্রাণশক্তি বা জাতির প্রতিভার উদ্বোধন আর হইল না। আর্য্যসংস্কৃতির পূর্ণ প্রভাব সত্ত্বেও ধর্ম্মানুষ্ঠান ও সমাজ-ব্যবস্থায় তাহার প্রকৃতিগত স্বাতন্ত্র্য কতখানি ফুটিয়া উঠিয়াছিল, স্বর্গীয় পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকটি মৌলিক প্রবন্ধে তাহার আলোচনা করিয়াছিলেন। তথাপি মনে হয়, ব্রাহ্মণ্য আদর্শের