পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९९8 বিবিধ কখা একটা স্ববিচারিত সত্যের কঠিন বন্ধনে তাহার মন কখনও ধরা দিতে পারে না। রামমোহন বাঙালীর ধৰ্ম্মবিশ্বাস ও সমাজব্যবস্থার অবস্থতির দিকটাই দেখিয়াছিলেন, এবং মনে করিয়াছিলেন, বেদ-উপনিষদের সত্যধৰ্ম্ম হইতে ভ্ৰষ্ট হইয়াই তাহার এই দশা ঘটিয়াছে। কিন্তু বাঙালী জাতির রক্তের ধৰ্ম্ম যাইবে কোথায় ? বাঙালীর ব্রাহ্মণ্য সংস্কার একটা সংস্কার মাত্র ; তাহার জাতিধৰ্ম্মই তাহার নিয়তি, তাহাকে সে লঙ্ঘন করিবে কেমন করিয়া ? এজন্য রামমোহনের ঈপ্সিত বা ইঙ্গিতকৃত যে আদর্শ, বাঙালীর চিন্তাধারায় তাহা কতক পরিমাণে প্রভাব বিস্তার করিলেও—তাহার প্রাণমূলে শক্তিসঞ্চার করিল না। ষড়দর্শন যেমন তাহার কীৰ্ত্তি নহে, বেদান্ত ও উপনিষদও তেমনই তাহার মনোধৰ্ম্ম নহে। নব হিন্দুধর্মের পুরাণ-উপপুরাণের মধ্যে সে কতকটা আত্মতৃপ্তির উপায় করিয়াছিল, তথাপি কোনও একটা তত্ত্বকে সে প্রাণ সমর্পণ করে না ; সে ভাবপন্থী, জ্ঞানপন্থী নয়। রামমোহন এই পুরাণ-উপপুরাণের মূলোচ্ছেদ করিয়া হাজার বৎসরের সংস্কারকে উৎপাটন করিয়া যে প্রাচীন আৰ্য্যধৰ্ম্মকে, আধুনিক যুক্তিবাদ ও সেমিটিক ধৰ্ম্মবিশ্বাসের মুকঠিন একেশ্বরবাদের দ্বারা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিতে চাহিয়াছিলেন, তাহাতে ভারতের সহিত বহির্জগতের এবং পুরাকালের সহিত আধুনিক কালের একটা রফা-মীমাংসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হইয়াছিল। কিন্তু ধৰ্ম্ম তো একটা চিন্তাপ্রণালীর সিদ্ধান্ত নয়—উৎকৃষ্ট উপদেশ বা চরিত্র-সংগঠনী শিক্ষাই ধৰ্ম্মের সার মৰ্ম্ম নয়, যুগ প্রয়োজনই তাহার সর্বস্ব নয়। ধৰ্ম্ম জাতির স্বভাবের অনুকূল হইয়াই তাহার প্রাণের শ্রেষ্ঠ প্রয়াসের প্রতিরূপ-হিসাবে সত্য ও সার্থক হইয়া উঠে । তাই বৌদ্ধধৰ্ম্ম ভারত হইতে নিৰ্বাসিত হইয়াছে ; খ্ৰীষ্টের ধৰ্ম্ম আজিও যুরোপের ধৰ্ম্ম হইয়া উঠিতে পারে নাই ;