পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙালীর অদৃষ্ট
২২৫

ভারতীয় মুসলমানের পক্ষে ইস্‌লামও বিশেষ ফলপ্রদ হয় নাই, মুসলমান-আগমন হইতে আজ পর্য্যন্ত ভারতীয় জাতিসমূহের মধ্যে ইসলাম কোনও সঞ্জীবনী শক্তির পরিচয় দেয় নাই। বাঙালীর জাতি-ধর্ম্ম এক, আবার সেই ধর্ম্মের সঙ্গে, বহুকাল ধরিয়া ব্রাহ্মণ্য সংস্কারের দ্বন্দ্ব ও মিলনের ফলে তাহার যে প্রকৃতি দাঁড়াইয়াছে তাহা তেমনই জটিল। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে এই জটিল গ্রন্থিপাশে টান পড়িয়াছে; রামমোহন তাঁহার ক্ষুরধার যুক্তি-তত্ত্বের আঘাতে এই গ্রন্থিপাশ ছিন্ন করিতে চাহিয়াছিলেন, অথবা সকল গ্রন্থি খুলিয়া একটি গ্রন্থি বাঁধিয়া দিতে চাহিয়াছিলেন। ইহা একপ্রকার অসাধ্য-সাধন বলিয়াই রামমোহনের প্রতিভা প্রতিভাই রহিয়া গিয়াছে, তাহা জাতির একটা মুক্তিপথ—নির্দ্দেশ করিলেও—নির্ম্মাণ করিতে পারে নাই।

 মুক্তিপথ আজিও মেলে নাই, তখনও মিলিবে কি না কে জানে! কিন্তু এ যুগে বাঙালীর সেই জাতি-ধর্ম্ম প্রবল পাশ্চাত্য প্রভাবে আবার সাড়া দিয়াছে—সে আবার ভাবের ঘোরে স্বপ্ন-সঞ্চরণ করিয়াছে। রামমোহনের মধ্যে বাঙালীত্বের পরিবর্ত্তে যে আর্য্য-সংস্কার সজাগ হইয়া উঠিয়াছিল, আর এক দিক দিয়া সেই আর্য্য-সংস্কারের নামে বঙ্কিমচন্দ্র ও বিবেকানন্দ যে নব্য-হিন্দুয়ানির স্বপ্ন দেখিলেন, যে ভাবসাধনা ও সাহিত্যের প্রতিষ্ঠা করিলেন, তাহা কিন্তু আদৌ আর্য্য-সংস্কৃতি নহে, তাহা বাঙালীর নিজস্ব মনীষা ও কল্পনার ফল। বাঙালীর এ যুগের