পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতির জীবন ও সাহিত্য
১১

সংস্কার তাঁহার ছিল না। বিবেকানন্দ তাঁহার গুরুর দ্বারা আরও দুরূহ মন্ত্রে দীক্ষিত হইয়াছিলেন, তাঁহার প্রবল হৃদয়াবেগ একটা বড় তত্ত্বকেই আশ্রয় করিয়াছিল। সে তত্ত্বও তাঁহার গুরুর মূর্ত্তিতে শরীরী হইয়া তাঁহার প্রত্যক্ষগোচর হইয়াছিল। শ্রীরামকৃষ্ণ মানুষের মনুষ্যত্বকে কোন দিকে ক্ষুন্ন না করিয়া, আধিভৌতিক ও আধ্যাত্মিকের এক অপূর্ব্ব সমন্বয় সাধন করিয়াছিলেন। যে প্রেম ভূমিকে ভূমার সহিত যুক্ত করিয়া এই মর্ত্ত্যজীবনেই মানুষকে মহামহিমার অধিকারী করে—সেই প্রেমকেই বিবেকানন্দ তাঁহার গুরুর মূর্ত্তিতে দেখিয়াছিলেন; তাই তাঁহার জন্মগত অধ্যাত্ম-পিপাসা, ব্যক্তিসাধনার পথে বাধা পাইয়া, মানব-প্রেম ও মানবসেবার বিপরীত মুখে নিয়ন্ত্রিত হইয়াছিল। শ্রীরামকৃষ্ণ এই সমন্বয়ের অবতার—তাঁহার প্রদর্শিত পথে, ভারতীয় অধ্যাত্মবাদকে বর্জ্জন না করিয়াও, মানুষকে তাহার স্বাধিকারে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হইয়াছিল।

 যে সঙ্কটের ভাবনায় আমি গত যুগের বাঙালী-প্রতিভার একটি বিশিষ্ট পরিচয় আপনাদের সমক্ষে উপস্থাপিত করিয়াছি, সেই সঙ্কটে, এই তিন যুগন্ধর পুরুষের মধ্যে যাঁহার মনীষা ও প্রতিভা সর্ব্বাপেক্ষা শিক্ষাপ্রদ, সেই বঙ্কিমচন্দ্রের সম্বন্ধে অতঃপর কিছু বিশেষ করিয়া বলিব। বঙ্কিমচন্দ্র, বিদ্যাসাগরের মত, এই মানব-ধর্ম্মের সহজ সংস্কারবশে, যুগসন্ধির একটা সাক্ষাৎ প্রয়োজন-সাধনে জীবন উৎসর্গ করেন নাই। বিদ্যাসাগর সমাজের ভূত-ভবিষ্যৎ চিন্তা না করিয়া তাহার বর্ত্তমান সম্বন্ধেই পূর্ণ-সচেতন ছিলেন—তাঁহার ভাবিবার সময় ছিল না, তিনি কেবল কর্ম্ম করিয়াছিলেন। তাঁহার সেই মানব-প্রেম কোন চিন্তাভিত্তির সন্ধান করে নাই—সে প্রেমকে জাতির ধর্ম্মরূপে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়োজনবোধ তাঁহার ছিল না। তিনি মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি বা চিন্তানায়ক—