কোনটাই ছিলেন না; তিনি যেন মানব-প্রেমের সাকার বিগ্রহরূপে সমাজমধ্যে বিচরণ করিয়াছিলেন। এজন্য বিদ্যাসাগর নিজের মধ্যেই নিজে সমাপ্ত, প্রেম ও পৌরুষের একটি অক্ষয় প্রতিমারূপে, এ জাতির পূজা-মন্দিরে বিরাজ করিতেছেন। বঙ্কিমচন্দ্রও বিবেকানন্দের মত ছিলেন না; তিনি মানব-প্রেমকে দেশ-জাতি-নিরপেক্ষ একটা অত্যুচ্চ আদর্শের প্রভায় মণ্ডিত করিয়া সর্ব্বমানবের উপযোগী সাধনপন্থা আবিষ্কার করিতে প্রবৃত্ত হন নাই। তিনি ছিলেন কবি—কেবল ভাবুক বা ধ্যানী নয়,—শিল্পী ও স্রষ্টা। তাই তিনি তত্ত্ব অপেক্ষা তথ্যের—নির্ব্বিশেষ অপেক্ষা বিশেষের—অনুরাগী ছিলেন। তিনি সর্ব্বমানবের আদর্শকেই, একটা জাতির বিশিষ্ট হৃদয়-মনের উপাদানে, একটা বিশেষ রূপে গড়িয়া তুলিতে চাহিয়াছিলেন। তিনি খাঁটি মানবতার পূজারী, মানবধর্মী ছিলেন বলিয়াই, উচ্চ চিন্তা ও উচ্চ ভাবের নিরাকার-সাধনা সাবধানে পরিহার করিয়াছিলেন—সকল শ্রেষ্ঠ সংগঠনী ও স্বজনী প্রতিভার মত, তাঁহার প্রতিভাতেও তত্ত্বজ্ঞানের সঙ্গে প্রখর বাস্তবজ্ঞান ছিল। তিনি এক দিকে যেমন প্রেমহীন যুক্তিবাদ বা আত্মভাবপন্থা পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, তেমনই, মহাপ্রেমিক হইলেও— জাতিবর্ণহীন সন্ন্যাসীর আদর্শ তাঁহার আদর্শ হইতে পারে নাই। বিবেকানন্দ মানুষকে তাহার স্বকীয় মাহাত্ম্য উপলব্ধি করিয়া নির্ভয় হইতে বলিয়াছিলেন, কিন্তু তাহাতেও আত্মদর্শন বা অধ্যাত্মজ্ঞানের প্রয়োজন ছিল। বঙ্কিমচন্দ্র এই প্রেমকে মানুষের সুস্থ ও সহজ জীবনচেতনায় জাগাইয়া তুলিতে চাহিয়াছিলেন; এজন্য শাশ্বত সত্যের সন্ধানকে আপাতত দূরে রাখিয়া, এমন একটি পন্থা নির্দ্দেশ করিয়াছিলেন —যাহাতে প্রত্যক্ষ বাস্তবের প্রেরণাই মানুষকে তাহার ক্ষুদ্র স্বার্থের
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
বিবিধ কথা