জয় করিবার উদ্যম করিয়াছিলাম। এই যে নবধর্ম্মের প্রেরণা, ইহার মূলে ছিল—প্রেম; আত্মদানের মহাব্রতই এই নবধর্ম্মসাধনার নামান্তর। মানুষকে ভালবাসিতে হইবে, কিন্তু আপাতত তাহার সাধন-ক্ষেত্র এই দেশ ও এই সমাজ। এ সাধনার প্রথম সোপান—চিত্তশুদ্ধি; তজ্জন্য নিজ জাতি ও নিজ সমাজের কল্যাণকে একান্তভাবে বরণ করিতে হইবে; তাহাতে জাতি বাঁচিবে, এবং সঙ্গে সঙ্গে তোমারও আত্মার সদ্গতি লাভ হইবে। জাতির সেবা করিতে হইলে—তাহার পাপ, তাহার অজ্ঞান, তাহার সকল দুর্গতি ও লাঞ্ছনা আপনার সর্ব্ব অঙ্গে বহন করিতে হইবে; পতিতের পাতিত্যকে ঘৃণা করিলে চলিবে না, সেই পাতিত্যকে নিজেরই পাতিত্য মনে করিয়া অধীর হইতে হইবে। এই প্রেম বিবেকানন্দেরও ছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রেম-কল্পনা দেশমাতৃকার একটি মহনীয় মূর্ত্তির ধ্যান ও তাহারই দেশকালসম্মত বিগ্রহ রচনা করিয়াছিল; তিনি সেই মূর্ত্তির প্রতি ভক্তি উদ্রেক করিয়া পঙ্গুকে গিরিলঙ্ঘন করাইতে চাহিয়াছিলেন। বিবেকানন্দের প্রেম জ্ঞানমূলক, বঙ্কিমের ভক্তিমূলক; বঙ্কিমচন্দ্র এ জাতির মর্ম্মের কথা জানিতেন।
কিন্তু এই ধর্ম্মের সাধনপথে শীঘ্রই বিঘ্ন উপস্থিত হইল। প্রথমত, জাতি মানুষ হইয়া উঠিবার পূর্ব্বেই রাজনৈতিক সংগ্রামে মাতিয়া উঠিল। যাহারা অন্তরে জ্ঞান ও শক্তি লাভ করে নাই, নিঃস্বার্থ জনসেবার দ্বারা যাহাদের চিত্তশুদ্ধি হয় নাই—তাহাদের পক্ষে এই রাজনৈতিক আন্দোলন পরধর্ম্মের মতই ভয়াবহ। আগে সমাজ, পরে রাষ্ট্র—অন্তত জাতির শিক্ষা ও সমাজ কিয়ৎ পরিমাণে উন্নত না হইলে, রাজনীতির আলেয়া যে তাহাকে দিকভ্রান্ত করিবেই, তাহা বঙ্কিমচন্দ্র ও বিবেকানন্দ উভয়েই জানিতেন; এজন্য তাঁহারা এ বিষয়ে বার বার