পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
বিবিধ কথা

এখানে সবিস্তারে বর্ণনা করিব না—জাতির পক্ষে তাহা গ্লানিকর, ভাগ্যদেবতার পরিহাসরূপে তাহা অসহ্য বেদনাময়। একটু চক্ষু মেলিয়া চাহিলেই দেখা যাইবে, জাতির আত্মবিনাশ-যজ্ঞের সেই অগ্নি এখনও দিগন্ত জুড়িয়া জ্বলিতেছে। আজ আমরা জাতীয়তার নামে শিহরিয়া উঠি; মানবজাতির ইতিহাসে যাহা অতুলনীয়, সেই হিন্দু-সংস্কৃতির উল্লেখ করিতেও আমাদের রসনা অবশ হইয়া উঠে। ইহার কারণ এই নয় যে, আমরা এক্ষণে আরও বড় সংস্কৃতি লাভ করিয়াছি—আমাদের প্রাণে-মনে কোন উদারতর উপলব্ধি ঘটিয়াছে। ইহার এক মাত্র কারণ, আমাদের মনুষ্যত্ব আর বাঁচিয়া নাই, আমাদের চরম অধঃপতন হইয়াছে। বঙ্কিমচন্দ্র এ জাতির চরিত্রে যে কদর্য্য স্বার্থপরতা দেখিয়া শঙ্কিত, এমন কি হতাশ হইয়াছিলেন, তাহাই আজ নূতন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কাল্‌চারের অনুমোদন পাইয়া নির্লজ্জ তাণ্ডবে মাতিয়া উঠিয়াছে। বড় কথাকে আমরা সাগ্রহে শিরোধার্য্য করিয়াছি, পাছে ছোট কথার অপরিসর গণ্ডিতে আত্মসুখচর্চ্চার ব্যাঘাত হয়। আজ বাঙালীর বিদ্যাসাগর নাই, বঙ্কিমচন্দ্র নাই, বিবেকানন্দ নাই; শিবা ও সারমেয় বেষ্টিত কয়েকটা শশ্মান-প্রহরী মাত্র আছে।

 অপেক্ষাকৃত আধুনিক ইতিহাসে আমাদের নবজীবনলাভের প্রয়াস ও তাহার নিষ্ফলতার কাহিনী সংক্ষেপে আপনাদিগকে শুনাইলাম। ইহা অবশ্য ঘটনা বা তথ্যগত ইতিহাস নয়; কিন্তু জাতির চারিত্রিক কোষ্ঠীবিচারে যে গুরু-বল ও শনির দৃষ্টি—উভয়ের ফলাফল দেখা যায়, আমি সাধ্যমত তাহাই বিচার করিবার চেষ্টা করিয়াছি— ঘটনাগত ফলাফল আপনারা মিলাইয়া দেখিবেন। আপনারা যেরূপ সাহিত্য-সেবায় ব্যাপৃত আছেন, তাহার সহিত জাতির এই