ভাগ্যবিপর্য্যয়ের কথাও যেন ভাবনা ও চিন্তার বিষয় হইয়া থাকে। সাহিত্যের সঙ্গে জাতির সর্ব্ববিধ আশা-আকাঙ্ক্ষার যোগ যে কত ঘনিষ্ঠ, তাহা আপনারা জানেন; বাহিরের সংঘাতে জাতির অন্তর্জীবনে যে স্রোতোবেগ বা তরঙ্গভঙ্গ উৎপন্ন হয়, সাহিত্যের উন্নতি-অবনতি মুখ্যত তাহার উপরেই নির্ভর করে। সেই স্রোত যদি রুদ্ধ হইয়া আসে, বাহিরের জগতে যদি সে জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে আসিয়া দাঁড়ায়, তাহা হইলে তখন আর সাহিত্যের সাহিত্যিক সমস্যা, ইতিহাস বা প্রত্নতত্ত্বই, কোনও বিদ্বন্মণ্ডলীর একমাত্র গবেষণার বস্তু হইয়া থাকিতে পারে না। তাই আজিকার দিনে আমি সাহিত্য অপেক্ষা জীবনের কথা ভাবিতেছি, সাহিত্যের কলাশিল্প অপেক্ষা তাহার অন্তর্গত পৌরুষ, প্রতিভা ও প্রাণশক্তির সন্ধান লইতে ব্যাকুল হইয়াছি। জাতির ভাষা ও সাহিত্যই তাহার প্রাণশক্তির আধার, সেই আধারেই তাহার শ্রেষ্ঠ সাধনার সিদ্ধিফল সঞ্চিত হইয়া থাকে; কিন্তু অমৃতের সঙ্গে বিষও উৎপন্ন হয়, জীবনের উৎসঙ্গে মৃত্যুর বীজ নিহিত থাকে। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক শেষ না হইতেই আমাদের সাহিত্যে সেই মৃত্যুর বীজ অঙ্কুরিত হইয়াছে—জীবনোত্তাপবর্জ্জিত ভাবসৌন্দর্য্যের আরাধনা, আত্মরতির গীত-রস, ও কলাকৌশলময় শব্দবিন্যাসের মোহ আমাদের মেরুদণ্ড শিথিল করিয়াছে— চরিত্রবল হরণ করিয়াছে। এ যুগে সাহিত্যের যে আদর্শ আমাদিগকে মুগ্ধ করিল, তাহা ব্যক্তির মানসবিলাসের অনুকূল; তাহাতে মানুষের সঙ্গে মানুষের সহজ আত্মীয়তার অবকাশ সঙ্কীর্ণ হইয়া উঠিল; সামাজিকতা ও সমজাতীয়তার যে প্রাণস্পন্দন ও তজ্জনিত যে দায়িত্ববোধ, তাহার পরিবর্ত্তে স্বৈরতন্ত্রের দুর্নীতি, ও আর্টের সর্ব্বসংস্কারমুক্তি অতিরিক্ত প্রশ্রয় পাইল; এবং তাহার ফলে
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৩০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতির জীবন ও সাহিত্য
১৭
