প্রেমের বলিয়াই—অলৌকিক। সে শক্তি অসাধ্য সাধন করে, তাহার প্রাণদ মন্ত্রে মরুভূমিতে উৎসবারি শুষ্ক তরুতে মঞ্জরীশোভা, এবং রুক্ষ পাষাণে অঙ্কুরোদ্গম সম্ভব হইয়া থাকে। সেই শক্তির আবির্ভাব হইবে—বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম ও বিবেকানন্দের তপস্যা নিষ্ফল হইবে না। আমাদেরই বংশধর বর্ত্তমান যুব-সম্প্রদায়ের মধ্যে সেই প্রাণের আভাস ইতিমধ্যেই যেন কিঞ্চিৎ দেখা যাইতেছে। সত্য বটে, বয়স্ক-সমাজ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণের আচার-আচরণ লক্ষ্য করিয়া, এবং দেশের মধ্যেই কোন শক্তি বা ধর্ম্মবুদ্ধির আশ্বাস না পাইয়া, তাহারা দেশ ও জাতির গণ্ডি অতিক্রম করিবার প্রয়াসী; তাহাতে যে জীবনের সত্য নাই, ইহাও ঠিক। কিন্তু মতবাদের জড়ধর্ম্মের উপরে হৃদয়ের প্রেমধর্ম্ম যদি জয়ী হয়, তবে এ ভুল শীঘ্রই ভাঙিবে, এবং ইহাদেরই মধ্য হইতে সেই পুরুষের আবির্ভাব হইবে, যাঁহার নিশ্বাস-বায়ুর স্পর্শমাত্রে সমগ্র জাতি সঞ্জীবিত হইয়া উঠিবে। এই সঞ্জীবনী-শক্তির প্রমাণস্বরূপ আমি গত শতাব্দীর সেই সাধনার কথা বলিলাম, মানব-প্রেম ও মানব-সেবার সেই প্রাণগত আদর্শের পরিচয় করিলাম। উত্তরকালে মানব-প্রেমের যে অর্থ দাঁড়াইয়াছে—এ প্রেম তাহা হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এ প্রেম আত্মার নামে আত্মপূজা করে না, মানুষকে ভাল না বাসিয়া মহামানবকে ভালবাসে না, ভালবাসা নিষ্ফল হইল দেখিয়া আক্ষেপ ও অনুশোচনায় অধীর হয় না, আপন শুচিতা রক্ষার জন্য সর্ব্বদা কলুষভয়ে ভীত নয়, মুমূর্ষুর শিয়রে বসিয়া তাহার পাপের পরিমাণ চিন্তা করে না। সেরূপ সুক্ষ্মহিসাবী সত্যনিষ্ঠ প্রেমের মোহ হইতে আমি আমার জাতির মুক্তি কামনা করি। তাহার জন্য যে ধরনের সাহিত্যচর্চ্চা আবশ্যক, সকল সাহিত্য-সংসদ যেন তাহারই সহায়তা করেন—এ কালরাত্রির সকল
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৩২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতির জীবন ও সাহিত্য
১৯
