এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে, তাহার পক্ষে কোনরূপ অসত্যের সঙ্গে সন্ধি করা অসম্ভব। মানুষ এই দ্বন্দ্বের নিরসন-চেষ্টাও করিয়াছে, সত্যের সঙ্গে ধৃতি ও ক্ষমাকেও মহাপুরুষ-লক্ষণ বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছে। কিন্তু এ সাধনা অতি কঠিন সাধনা,—ইহার মূলে সত্যের যে উপলব্ধি থাকা প্রয়োজন, তাহা জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে একটা বৈরাগ্যমূলক ধারণার উপরেই প্রতিষ্ঠিত। সেখানে এই নৈতিক সত্য বা চরিত্রধর্ম্মের মূল্যও যেমন অল্প, তেমনই, যে প্রেম বলে—“It is really the errors of man that make him lovable”—সেই প্রেমের মোহ নাই বলিলেই হয়।
“To know all is to pardon all”—এই বাক্যে যে প্রকার জ্ঞানের ইঙ্গিত আছে, সেই জ্ঞানের কাছে সমাজনীতি বা চরিত্রনীতি ছোট হইয়া যায়। পূর্ব্বে বলিয়াছি, সত্যনিষ্ঠার মধ্যে একটা অহঙ্কার আছে, ব্যক্তির একটা স্বাতন্ত্র্য-জ্ঞান আছে; যে ব্যক্তি সত্যনিষ্ঠ, সে যেন সমাজের মধ্যেই দাঁড়াইয়া আপনাকে স্বতন্ত্র মনে করিতে চায়, কারণ, সকলেই তাহার মত সত্যনিষ্ঠ নয়, তাহা সে জানে। কিন্তু পূর্বোল্লিখিত জ্ঞান যাহার হইয়াছে, সে সত্যকে বিশ্বের মধ্যে প্রসারিত করিয়া, সকলকে তাহার অন্তর্গতরূপে দেখে বলিয়া, সকলের সকল ত্রুটিবিচ্যুতির মধ্যে এমন একটা মহানিয়ম আবিষ্কার করে, যাহার জন্য কাহাকেও দায়ী করিতে পারে না। এমন অবস্থায় ‘মরালিটি’কে সে একটা সংস্কার বলিয়াই মনে করে; একেবারে নিষ্প্রয়োজন মনে না করিলেও, সে তাহার একটা সীমা নির্দ্দেশ করিয়া দেয়।
যে অহং-সংস্কার মানুষের জীবধর্ম্ম, যাহার স্ফূর্ত্তি মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে প্রয়োজন—আদিম সমাজের সত্যনিষ্ঠায় যাহা বীজরূপে বর্ত্তমান