পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
বিবিধ কথা

ছিল, তাহাই সমাজ-জীবনের জটিলতার প্রভাবে একটা সজ্ঞান নৈতিক আদর্শের প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। কিন্তু আরও পূর্ব্ব হইতেই, ইহারই বশে মানুষের প্রাণে আর একটা বৃত্তি জাগিয়াছে, ইহার নাম ভক্তি বা Faith। জগৎ বা জীবন-ব্যাপারের একটা দুর্জ্ঞেয় রহস্য মানুষকে প্রতি পদে অভিভূত করিয়াছে— আপনার অহং-সংস্কারের উপযোগী করিয়া মানুষ যাহাকে ধরিয়া থাকিতে চায়, বাহিরে চতুর্দ্দিকে তাহার বিরুদ্ধ প্রমাণ তাহাকে দিশাহারা করিয়া তোলে। প্রকৃতি যেন প্রতি পদে তাহাকে সাবধান করিয়া দিতেছে—যাহা তোমার জীবধর্ম্মের প্রয়োজন, তাহার অধিক জানিতে চাহিও না। প্রকৃতিপরবশ মানুষ তাহাই স্বীকার করিয়াছে, নিজের অহং-সংস্কার একটা বৃহত্তর অহংকে সমর্পণ করিয়া দুই দিক রক্ষা করিয়াছে। এই পরাজয়মূলক জয়, এই যে আত্মরক্ষার জন্যই আত্মসমর্পণ, ইহারই নাম—Religion। এ প্রবৃত্তি অতিশয় আদিম ও অতিশয় প্রবল। যে নৈতিক সত্যনিষ্ঠার কথা পূর্ব্বে বলিয়াছি, তাহাতে মানুষ আপনার উপরেই অনেকটা নির্ভর করে, এবং আপনার মত করিয়া একটা যুক্তিবিচারও খাড়া করে, এবং শেষ পর্য্যন্ত বিবেকের দোহাই দেয়। ইহার মধ্যেও প্রকৃতির প্ররোচনা আছে—কেবল, সে তাহা স্বীকার করে না— “অহঙ্কারবিমূঢ়াত্মা কর্তাহমিতি মন্যতে।” কিন্তু ধর্ম্ম-বিশ্বাসের বলে বলীয়ান মানুষ এই অহংকে বিসর্জ্জন দিয়াই একটি অপূর্ব্ব আত্মপ্রসাদ লাভ করে।

 এই Faith বা ভক্তির মূলে যাহাই থাক, ইহার বশে হৃদয়বৃত্তি জ্ঞানবৃত্তিকে দমন করিয়া রাখে। সত্যনিষ্ঠার মধ্যে যে নৈতিক আদর্শ আছে, তাহাতে সত্য-জিজ্ঞাসা না থাকিলেও একটা ব্যবহারিক সত্যাসত্য-জ্ঞান আছে; ধর্ম্ম-বিশ্বাস অন্ধ, এখানে ‘ত্বয়া হৃষীকেশ