পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
বিবিধ কথা

fill the world with amazement for thousands of years”। তাই, এই সকল গুরুদের বাণী মানুষের মনে কোনও জিজ্ঞাসামূলক সত্যের প্রতিষ্ঠা করে নাই, মানুষকে অন্ধ-বিশ্বাসের বলে বলীয়ান করিয়াছে মাত্র। বাণী অপেক্ষা গুরু বড় হইয়াছে, গুরুর পূজা বাণীতে বর্ত্তিয়াছে। যে যুদ্ধ সত্যকে ব্যক্তিনিরপেক্ষ করিতে চাহিয়াছিলেন, যিনি বার বার উপদেশ দিয়াছিলেন, ‘বুদ্ধ’ কোনও ব্যক্তি নয়, মানুষ মাত্রেরই সাধনার আদর্শ-স্বরূপ একটা Idea—সেই বুদ্ধই পরিশেষে শত সহস্র বিগ্রহ-রূপে পূজা পাইয়াছেন!

 ইহাই মানুষের স্বভাব, ইহাই তাহার ধর্ম্ম। সত্য কি? এ জিজ্ঞাসা মানুষের প্রকৃতিগত নয়; মানুষের প্রকৃতি ও জীবন-যাত্রার সঙ্গে ইহার কোনও সম্বন্ধ নাই। সত্যের যে আদর্শ মানুষের পক্ষে সহজ ও স্বাভাবিক, তাহা কোনও তত্ত্বের ধার ধারে না। জীবধর্ম্মের দুইটা প্রয়োজন—আত্মরক্ষা ও আত্মপ্রসার; এই দুইটির স্বাভাবিক নিয়মে যে নীতির উদ্ভব হইয়াছে, তাহা তত্ত্ববিচারের অধীন নয়। মানুষ যাহা বিশ্বাস করে তাহাই সত্য। এই বিশ্বাস ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত। মানুষ আপনাকে প্রকৃতি হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া যে তত্ত্বজিজ্ঞাসার সূত্রপাত করিয়াছে, তাহা তাহার মনোবৃত্তির বিলাস মাত্র; এই বিলাসকেই যদি সে ধর্ম্ম বলিয়া মনে করে, তবে তাহার স্বাস্থ্যহানি হয়। স্বাভাবিক প্রবৃত্তির বশে মানুষের একটা স্থূল ঐক্যবুদ্ধি আছে, এই বুদ্ধির দ্বারা মানুষ ভিতরে ও বাহিরে একটা কিছুকে এক করিয়া লইতে চায়—এই একনিষ্ঠার মধ্যে যে সত্য-চেতনা আছে, তাহাই তাহার পক্ষে যথেষ্ট। ইহার বশে আত্মসম্বরণ ও আত্মপ্রসার—এই দুই ধারায় মানুষের জীবন প্রবাহিত হইতেছে।